অথবা, সুফি সাধনার পথসমূহ লেখ।
অথবা, সুফিবাদের স্তরসমূহ তুলে ধর।
অথবা, সুফিবাদের স্তরগুলো কী কী?
অথবা, সুফি সাধনার পথসমূহ কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : সুফিবাদ একটি ব্যবহারিক বিষয়। কেউ জন্ম থেকে সুফি সাধনার বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয় না। সুফি সাধনার গুণগুলো অর্জন করতে হয়। আর সুফিবাদের মূল লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যেসব মৌলিক বিষয় অনুসৃত হয় তাকে বলে সুফিবাদ ।
সুফিসাধনার পথ বা স্তর : সুফি সাধনার পথ বা স্তরসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. শরীয়ত : একজন সুফির জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। সুফি পথ-পরিক্রমার প্রথম পথ হলো শরীয়ত । শরীয়ত বলতে বুঝায় ইসলামি জীবন বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন। ইসলামি শরীয়তের সকল হুকুম আহকাম সকলের জন্য অবশ্যই পালনীয়। ইসলামে যত নবী রাসূল এ দুনিয়াতে এসেছেন তারা সকলেই শরীয়ত পালন করেছেন।
২. তরিকত : তরিকা অর্থ হলো পদ্ধতি। কোন কিছু করতে হলে এবং সেটি হতে সর্বোচ্চ ফল লাভ করতে হলে সেটি পদ্ধতি অনুসারে করতে হয়। সুফিবাদ মনে করেন যে, আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের জন্য এবং এর থেকে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য তরিকত অনুসরণ করতে হবে। সুফি পীর বা মুর্শিদের নিকট বায়াত গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে বিনা বাক্যে মুরিদ পালন প্রস্তুত হয়।
৩. মারেফত : তরিকতের উচ্চ স্তর হলো মাতে। এ স্তরকে আধ্যাত্মিক জ্যোতির স্তর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ স্তরে সুফিসাধকের কলবে আধ্যাত্মিক জ্যোতির ঝলক প্রতিফলিত হয়। এর ফলে সুফি বস্তুর নিগূঢ় তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেন। সৃষ্টি রহস্যের কালো পর্দা তার কাছে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। এর ফলে তাঁর অন্তরে এক আলোচিত সত্যের আলো প্রতিফলিত হয় ।
৪. হকিকত : মারেফতের পরবর্তী স্তর হলো হকিকত। মারেফতের জ্ঞান লাভের পর হকিকতের স্তরে এসে সুফি সত্য জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়। তবে এ স্তরে পৌঁছার জন্য আল্লাহর উপর করুণা আবশ্যক। কেননা, আল্লাহর অসীম রহমত ছাড়া তাঁর জ্ঞানের বিন্দু মাত্রও হতে পারেন না। সুফিগণ বিশ্বাস করেন যে, শুধু ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকৃত
সত্য উপলব্ধি হয় না। এ স্তরে সুফি আল্লাহ হতে আত্মবিলোপ সাধন করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একজন সুফি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নানাবিধ আধ্যাত্মিক সাধনা করে থাকে। সুফি সাধনা বিচিত্র ঘটনা। এর রয়েছে নির্দিষ্ট পথ। সেগুলো হলো শরীয়ত, তরিকত, মারেফত ও হকিকত।