অথবা, বিচ্যুতি ও অপরাধের সুনির্দিষ্ট ধারণা দাও।
অথবা, বিচ্যুতি ও অপরাধের যুক্তিসঙ্গত ও বোধগম্য সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিটি মানুষের রয়েছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ, যা তাকে আলাদা করে অন্যজন থেকে। এ আলাদা আলাদা সত্তার ফলে সমাজে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন ধারার।
বিচ্যুতি ও অপরাধ : বিচ্যুতি এবং অপরাধ দুটি বিষয় ব্যাক্তি সংশিষ্ট ঘটমান প্রেক্ষাপট। এ দুটি বিষয়ের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যদিও কিছু যৌক্তিক সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করা হলো :
এমিল ডুরখেইম তাঁর ‘Sucide’ গ্রন্থে আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে অপরাধমূলক আচরণ ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, “সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা ব্যক্তি সমাজের প্রতি তার প্রত্যাশা বা তার প্রতি সমাজের প্রত্যাশা জানাতে পারে। আর যখনই ব্যক্তি সমাজের কাছে তার চাহিদা পূরণে তৎপর হয় তখন বিভিন্ন শ্রেণীমুখী স্বার্থ ও সামাজিক অসংগতির ফলে অর্থাৎ Anomic এর কারণে সে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। ফলে ব্যক্তি এ Norms বা Values অবস্থার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে এবং ক্রমান্বয়ে Deviant হয়ে যায়।” বিচ্যুতির সংজ্ঞায় ডুরখেইম বলেন, “আধুনিক সমাজে মানুষের মধ্যে আকাঙ্ক্ষা ও পরিতৃপ্তির মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা সমাজে বিদ্যমান সম্পদের মাধ্যমে মানুষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভব হয় না ফলে মানুষের সামাজিক কার্যাবলি বা বিচ্যুতিমূলক আচরণ বৃদ্ধি পায়।” সমাজবিজ্ঞানী বাকস্টোন অপরাধের সংজ্ঞায় বলেন, “A crime is an act committed or ommited, in violation of a public law either forbidding or commanding it.”
আলোচনা : বিচ্যুতি এবং অপরাধ দুটিই নেতিবাচক বিষয় হিসেবে পরিগণিত। বিচ্যুতি সংগঠিত হতে পারে নিজস্ব ধ্যানধারণা, মূল্যবোধ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বা প্রচলিত সংস্কৃতিকে খর্ব করে। আর অপরাধ সংগঠিত হতে পারে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। দুটির কোনটারই ফলাফল ভালো নয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিচ্যুতি এবং অপরাধ দুটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলেও দুটিই ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক। আর নেতিবাচক কোন কিছুই মঙ্গলজনক হয় না।