সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীর ভূমিকা নিরূপণ কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মী কী ভূমিকা পালন করতে পারে।
অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীর ভূমিকা বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীর গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা নিরসনে সমাজকর্মী কী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর৷ ভূমিকা : বিচিত্র এ মানবজীবন। জীবনের এ বৈচিত্র্যতার মাঝে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা প্রতিবন্ধকতা এবং নৈরাজ্যতা মানুষের স্বাভাবিক চলার গতিধারাকে ব্যাহত করে এবং সুষ্ঠু সামাজিক উন্নয়নের পথকে রুদ্ধ করে, যা সমাজ রাষ্ট্র তথা ব্যক্তি জীবনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অধিকসংখ্যক মানুষ এর সংশোধন ও নিরসনের ইচ্ছা পোষণ করে। এসব অসুবিধাকেই বলা হয় সামাজিক সমস্যা। পৃথিবীর সকল দেশ বা সমাজেই এ সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান। সমাজকর্মীর ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকর্মীরা সামাজিক সমস্যা সমাধানে নিম্নোক্ত ভূমিকা পালন করতে পারে। যথা :
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : জনসংখ্যা সমস্যা হল সামাজিক সমস্যার বড় কারণ। এ সমস্যার ফলে সমাজে অন্যান্য সমস্যা যেমন- বেকার সমস্যা, অপরাধপ্রবণতা, অশিক্ষা, পুষ্টিহীনতা প্রভৃতি দেখা যায়। বাংলাদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য অনেক বেশি, যা এদেশের পশ্চাৎপদের প্রধান কারণ। এ সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মী একটি কার্যকরী
ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন- সেমিনার, সমাবেশ করে নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে সজাগ ও সচেতন করে
তোলা। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এ সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ, অশিক্ষা, দারিদ্র্য প্রভৃতি কারণে জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক সমস্যার অন্যতম হল প্রাকৃতিক দুর্যোগ । প্রতি বছর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, সাইক্লোন প্রভৃতির কারণে সমাজে নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীরা বিশেষভাবে কাজ করতে পারে। যেমন- পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করে দেওয়া, কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদক দ্রব্য কম ব্যবহার করা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য
রক্ষায় বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রভৃতি বিষয়ে সর্বসাধারণকে সচেতন করে তোলা।
৩. কৃষির উন্নয়ন : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বিশ্বে খ্যাত। এ কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতা আনয়ন করে সমাজে বিরাজমান সমস্যা নিরূপণ করা যায়। কারণ দারিদ্র্য হল সামাজিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। এ দারিদ্র্য নিরসন করে সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর এ দারিদ্র্যতা নিরসনে কৃষির উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই ।
৪. সম্পদের সুষম বণ্টন : আমাদের দেশের ৮০ ভাগ সম্পদ ২০ ভাগ লোকের হাতে কুক্ষিগত এবং ৮০ ভাগ লোক

বাকি ২০ ভাগ সম্পদ ভোগ করে থাকে। এটা একটা বড় সামাজিক সমস্যা। এর ফলে সমাজে বিভিন্ন গ্রুপের সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা বেপরোয়া হয়ে সমাজে হত্যা, সন্ত্রাস, ছিনতাই করছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের বিভিন্ন চরমপন্থিদের কথা বলা যায়। ধনীদের থেকে সম্পদ নিয়ে গরিবের মাঝে বিলি করার যে প্রক্রিয়া তা নিশ্চয়ই কোন সঠিক পন্থা নয়। আর সমাজকর্মীরা এ সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। কৃষির যন্ত্রপাতি, কৃষির উন্নয়নের পদ্ধতি প্রভৃতি সম্পর্কে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের সজাগ করে তুলতে পারে। দিনাপ। বাংলাদেশে মাত্র ৩০% লোক শিক্ষিত, যা এদেশের
৫. শিক্ষার হার বৃদ্ধি : নিরক্ষরতা একটা দেশের জন্য অভিশাপ। বাংলাদেশে মাত্র ৩০% লোক শিক্ষিত, যা এদেশের
সামাজিক সমস্যার অন্যতম বড় রূপ । যেখানে অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত, সেখানে কোন উন্নয়ন আশা করা যায় না। আর এ বড় সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মীরা একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গ্রামের মানুষকে শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন করেন তোলা, শিক্ষার সুব্যবস্থাস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা, অবৈতনিক শিক্ষা চালুকরণে সরকারকে সুপারিশ করা প্রভৃতি কাজে তারা সহায়তা করতে পারে। যেমন- থানা পর্যায়ে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন স্যাটেলাইন প্রতিষ্ঠান এর ব্যবস্থা করা,
কিন্ডারগার্টেন এবং বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি চালু করা। এসব কাজে সরকারের পাশাপাশি তারা ভূমিকা রাখতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার পশ্চাতে রয়েছে আবার নানাবিধ কারণ। তাই এ কারণগুলো সঠিকভাবে টহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ থেকে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। আর এ সমস্যা সমাধানে দেশের সরকারের পাশাপাশি সমাজকর্মীরা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।