সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য কী?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, সামাজিক সমস্যার স্বরূপ বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যার মানদণ্ডগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
অথবা,সামাজিক সমস্যার প্রকৃতি বর্ণনা কর।
অথবা,সংক্ষেপে সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।

উত্তর৷ ভূমিকা : অপূর্ণতা হচ্ছে মানবসমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় সমস্যা। বিচিত্র এ মানবজীবন। জীবনের এ বৈচিত্র্যের মাঝে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা, প্রতিবন্ধকতা এবং নৈরাজ্য মানুষের স্বাভাবিক চলার গতিধারাকে ব্যাহত করে। সুষ্ঠু স্বাভাবিক উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে, যা সমাজ, রাষ্ট্র তথা ব্যক্তিজীবনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষিতে সমাজের অধিকাংশ মানুষ এর সংশোধন ও নিরসনের ইচ্ছা পোষণ করে। তখনই অনুরূপ অসুবিধাকে সামাজিক সমস্যা হিসেবে গণ্য করা হয়। মানবসমাজ বিকাশের সাথে সাথে সমস্যারও বিকাশ লাভ ঘটেছে।

সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য :
১. সমাজ নিঃসৃত : সামাজিক সমস্যার বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সর্বাগ্রে চলে আসে, সেটি হল এর
উদ্ভবের ক্ষেত্র বা পরিবেশ। সামাজিক সমস্যা সমাজের অভ্যন্তরে উদ্ভব হয়, বিকাশ লাভ করে এবং পরিপূর্ণতা পায়।
২. মূল্যবোধের অবক্ষয় : যে কোন ধরনের মূল্যবোধের অভাবের ফলে মানুষ নানামুখী সমস্যায় জড়িত হয়ে পড়ে।
সামাজিক সমস্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়কে নির্দেশ করা হয়। মানুষ যখন মূল্যবোধ হারিয়ে
ফেলে, তখন ভালোমন্দ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং এভাবেই সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
৩. মানসিক চাপ : সমাজ বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ প্রচলিত সমাজব্যবস্থার সাথে খাপখাওয়াতে না পারলে এক
ধরনের মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। মানসিক চাপ মানুষকে সঠিক পথে, অর্থাৎ সমাজের কাঙ্ক্ষিত আচরণ থেকে বিচ্যুত
রাখতে পারে ।
৪. স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথে হুমকি : সমাজ জীবনে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন অর্থাৎ, সুষ্ঠুভাবে বেঁচে
থাকা সবার মৌলিক সামাজিক অধিকার। কিন্তু সামাজিক সমস্যা মানুষকে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের পথে চলছে
ব্যাহত করে।
৫. কর্মস্পৃহা হ্রাস : সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষ স্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে দূরে সরে পড়ে। মানুষের
স্বাভাবিক কর্মস্পৃহা এর ফলে হ্রাস পেতে থাকে ।
৬. কর্মক্ষমতা হ্রাস : মানুষ সমাজে সমস্যার আবর্তে পড়লে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় মানুষ সবচেয়ে বেশি সময় ও
মেধা ব্যয় করে। এভাবে মানুষ কল্যাণমুখী কাজের ক্ষমতা অর্থাৎ, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।
৭. নতুন অভিজ্ঞতা : মানুষ সমাজ জীবনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সাথে পরিচিতি লাভ করে। এমন কোন মানুষ
পাওয়া যাবে না, যে সমাজ জীবনের সংস্পর্শে আসে নি এবং সমাজের সমস্যার সাথে পরিচিত হয় নি। মানুষ সমাজের
বিভিন্ন সমস্যা থেকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করে।
৮. সমাজের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত : সামাজিক সমস্যার কারণে সমাজের সমগ্র অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব ধরনের
সামাজিক সমস্যা সমাজের বৃহৎ অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৯. সামাজিক সমস্যার পরিমাপ : সামাজিক প্রপঞ্চ হিসেবে সামাজিক সমস্যা পরিমাপ করা যায়। সামাজিক
সমস্যাকে এর গতিপ্রকৃতি ও ধরনের ভিত্তিতে পরিমাপ করা হয়। সামাজিক সমস্যা গুরু, লঘু, মাঝারি বিভিন্ন Dimension
এর মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা এক মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি, য
সমাজ দেহের অধিকাংশ সদস্যকে প্রভাবিত করে। মূলত সমাজ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে সামাজিক কাঠামো সহজ ও একমুখী থাকায় সমস্যাও ছিল সহজসরল ও একমুখী। কিন্তু কালক্রে
শিল্পবিপ্লবসহ বিভিন্ন কারণে সামাজিক কাঠামো জটিলতার রূপ নেওয়ায় সামাজিক সমস্যাতেও আসে নানা জটিলতা
যোগ হয় নতুন প্রকৃতি ।