সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর ।

অথবা, সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্ম কিভাবে ভূমিকা রাখে? লিখ।
অথবা, কেন তুমি ধর্মকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করবে? লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যবিষয়। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে মূল লক্ষ্য হলো সমাজে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ দূরীকরণ এবং সম্ভাব্য সকল সমস্যা উদ্ভবের পথ প্রতিহতকরণ। তাছাড়া সমাজের সংহতি রক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা, পরিবার প্রভৃতি বাহনের মত ধর্মও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ও সমাধান।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্মের ভূমিকা : সাধারণত সমাজস্থ মানুষ যা ধারণ করে তাই ধর্ম বলে বিবেচিত হয়। প্রাচীনকাল হতে মানুষ কিছু বিশ্বাস ও ধারণা পোষণ করে আসছে। এ বিশ্বাসগুলো এক সময় ধর্ম বলে বিবেচিত হয়। ধর্মের ভিত্তিতেই বিভিন্ন প্রকার নৈতিক অনুশাসন ও সামাজিক বিধি ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। ধর্ম মানুষের আচরণকে সংযত করে। ধর্ম সামাজিক নীতিকে মেনে চলার জন্য স্বাভাবিক প্রবণতা সৃষ্টি করে। প্রাচীনকালে ধর্মের কার্যকারিতা ছিল অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল। ব্যক্তি জীবনের সকল দিক যেমন- জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, শিক্ষা, জীবিকার্জন, আচারআচরণ সব ক্ষেত্রেই ধর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য। প্রভাবশালীগণ ধর্মকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বাহন হিসেবে ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, সামাজিক নিয়মনীতির উদ্ভব ঘটে ধর্মের ভিত্তিতে। চিন্তাচেতনা ও কাজকর্মকে ধর্ম যুক্তিপূর্ণ ও কার্যকর করে তোলে। সামাজিক মূল্যবোধ সামাজিক স্বীকৃতি লাভ করে ধর্মীয় বোধের দ্বারা। এ সামাজিক মূল্যবোধ ব্যক্তির মধ্যে ব্যক্তির স্বার্থের দ্বন্দ্বকে অনেকাংশে সংযত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। শুধু তাই নয় ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সামাজিক সংহতি দৃঢ় করে। ধর্মীয় চেতনা সমাজে না থাকলে সমাজে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা এবং তা পরিশেষে সামাজিক সংহতি বিনষ্ট করে। তাই বলা যায় যে, ধর্ম সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হলো সামজের বৃহত্তর কল্যাণে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের উপর বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। আর ধর্ম হলো সেক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যার মাধ্যমে সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।