সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ

সামাজিক গবেষণার শ্রেণিভেদগুলো লেখ।

অথবা, সামাজিক গবেষণার শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার ধরণসমূহ লেখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণা কত প্রকার ও কি কি?
অথবা, সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা : বর্তমানকালে প্রতিটি সমাজ বহুবিধ জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্মুখীন; সেগুলোর জন্য প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তব সমাধান। এসব সমস্যা যেহেতু মানুষকে কেন্দ্র করে মানুে
আচরণকে ঘিরে, সেজন্য সত্যানুসন্ধানে বিভিন্ন পদ্ধতি অনিবার্য হয়ে পড়ে। এসব সামাজিক সমস্যার সত্যানুসন্ধানে গবেষণার একটি বিশেষ শাখা সামাজিক গবেষণা পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত।
সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ : সামাজিক গবেষণাকে অনুসন্ধান কাজের সুবিধার জন্য কয়েকটি ভাস ভাগ করা হয়। নিম্নে সামাজিক গবেষণার প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো :
১. পরীক্ষণ গবেষণা : পরীক্ষণমূলক গবেষণার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো পরীক্ষাগারে অনির্ভরশীল করে নিয়ন্ত্রণে রেখে গবেষণা চালনা করে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়। তবে মনোবিজ্ঞা যোগাযোগ কিংবা প্রশিক্ষণে এ ধরনের গবেষণা ব্যাপকভাবে পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সামাজিক গবেষণায় চলকগুলোতে
পরস্পর থেকে পৃথক করা কঠিন বলে এ ধরনের পদ্ধতি সামাজিক গবেষণায় কম ব্যবহৃত হয়। সামাজিক বনা আত্মনির্ভরশীল চলককে নিয়ন্ত্রণে রেখে গবেষণা চালনা করে থাকে।
২. মূল্যায়ন গবেষণা : সাম্প্রতিককালে প্রত্যেকটি গবেষণায় মূল্যায়ন গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রগুলো এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য মূল্যায়ন গবেষণা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। মূল্যায়ন গবেষণার তিনটি পর্যায় আছে। যথা :
ক. সহযোগী মূল্যায়ন : কোন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে অনবরত যে মূল্যায়ন চলতে থাকে তাকে সহযোগী মূল্যায়ন বলে। এ
ধরনের গবেষণা প্রকল্পের সাফল্য বা অকৃতকার্যতা মূল্যায়ন ছাড়াও দুর্বলতা নিরূপণ করে তা কাটানোর নির্দেশনা প্রদান করে।
খ. পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে ধাপে ধাপে বা বছরের অর্ধেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের পরপর যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন বলে। উন্নয়ন কার্যক্রম সন্তোষজনক কি না তা যাচাই করার জন্য সামাজিক গবেষণায় মূল্যায়ন গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. প্রান্তিক মূল্যায়ন : কোনো প্রকল্প বা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর তার সফলতা এবং ব্যর্থতা যাচাইয়ের জন্য যে মূল্যায়ন গবেষণা পরিচালনা করা হয় তাকে প্রান্তিক মূল্যায়ন বলে।
৩. বর্ণনামূলক গবেষণা : বর্ণনামূলক গবেষণা কোনো গ্রুপ, ব্যক্তিবর্গ কোনো পরিস্থিতি বা কোন নির্দিষ্ট ঘটনার সঠিক ও নির্ভুল চিত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে আলোচনা করে। এ গবেষণার চলকের উপর গবেষকের কোন প্রভাব না খাটিয়ে ঘটছে শুধু তার একটি বর্ণনা দান করে। এটি কোনো ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী, উপজাতি বা কোনো কৃষক পরিবারের
যা ঘটে বা জীবনযাত্রার উপর বিস্তৃত আলোচনা করে।
৪. ব্যাখ্যামূলক গবেষণা : ব্যাখ্যামূলক গবেষণায় বিভিন্ন চলকের বা ঘটনাবলির পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে সামাজিক ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করে। এছাড়া সুপ্ত অবস্থায় চলককে আলাদা করে ব্যাখ্যা করা হয়। এখানে গবেষক পরিসংখ্যান বা পরিমাণগত কৌশলের সাহায্য গ্রহণ করে থাকেন।
৫. ফলিত গবেষণা : ফলিত গবেষণার লক্ষ্য প্রাপ্ত তথ্যকে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা করে প্রয়োগ করা। এটি বাস্তব সামাজিক সমস্যা সমাধানে পদ্ধতি কৌশল ও নীতিমালা নির্ণয়ের চেষ্টা করে থাকে। বিভিন্ন কৌশল, পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার, লাইব্রেরির সুযোগ সুবিধাগুলো ফলিত গবেষণার অন্তর্গত।
৬. মৌলিক গবেষণা : মৌলিক গবেষণা সবচেয়ে পুরাতন গবেষণা। এ Fundamental গবেষণার ল ক্ষ্য হলো মৌলিক নীতি ও সত্য আবিষ্কার করা। এ গবেষণায় তত্ত্বের পরীক্ষা ছাড়াও নতুন নতুন তত্ত্বের বিকাশ ঘটায় পুরনো তত্ত্বের উপর ভর করে। মৌলিক গবেষণা প্রচলিত তত্ত্বের পুনঃ ব্যাখ্যার জন্য প্রচলিত তত্ত্ব থেকে নতুন তত্ত্ব লাভ করে।
৭. কার্যোপযোগী গবেষণা : কোনো অঞ্চলের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য ক্ষুদ্র গবেষণাকে কার্যোপযোগী গবেষণা বলা হয়। এখানে জরিপ পদ্ধতি ও ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার পদ্ধতি ব্যবহার করে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করা হয়। এ গবেষণা স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।
৮. জরিপ গবেষণা : সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক চলকের আন্তঃসম্পর্ক নির্ণয়ে জরিপ পদ্ধতি ছোট নমুনা দ্বারা তার কার্য পরিচালনা করা হয়। একটি বা কয়েকটি গ্রাম বা থানা থেকে নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে এ ধরনের গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
৯. উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা : রীতিসিদ্ধ গবেষণা সাধারণ ধারণা এবং সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনাসমূহকে বিকশিত করে এবং তা থেকে নতুন চিন্তাধারা গঠন করে। এর ভিতর থেকে নতুন কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা করে। নতুন আঙ্গিকের কোন সামাজিক ইস্যুতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

১০. অন্যান্য গবেষণা : উপর্যুক্ত গবেষণাগুলো ছাড়াও সামাজিক গবেষণার আরও কিছু গবেষণা লক্ষ্য করা যায়। যথা :
অংশগ্রহণমূলক; ii. অংশগ্রহণবিহীন; iii. বিশ্লেষণমূলক; iv. পরিমাণগত; v. গুণবাচক এবং vi, ঐতিহাসিক গবেষণা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। সামাজিক গবেষণার সুবিধার জন্য সামাজিক গবেষণাকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। তবে যে কোন গবেষণা চালাতে গবেষককে অবশ্যই সাহস, নিরপেক্ষতা, ধীরস্থির মনোভাব এবং ধৈর্য থাকা বাঞ্ছনীয়।