অথবা, সামাজিক সামাজি ৩শীলতার সাংগঠনিক গুরুত্ব কতটুকু আলোচনা কর।
অথবা, গতিশীলতার সাংগঠনিক গুরুত্ব কী অপরিসীম? এ প্রসঙ্গে কি তোমার মতামত দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক অবস্থা কখনো একরকম থাকে না। চক্রাকারের আবর্তনের ন্যায় সমাজ তার অবস্থানে থেকে আবর্তিত হচ্ছে। সমাজের পরিবর্তনের ধারায় কখনো এটা উঁচুতে আবার কখনো নিচুতে অবস্থান করে থাকে। বাস্তবিক চিন্তাধারায় আমরা খুব সহজেই সমাজের পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় সভ্যতার উন্নতি, অগ্রগতি, সমৃদ্ধি পর্যালোচনা করতে পারি। বস্তুত সামাজিক মর্যাদা এ পরিবর্তন বুঝাতে সামাজিক গতিশীলতা শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তা চলন্ত প্রক্রিয়া, এখানে এখানে অবশ্যই পরিবর্তন ঘটে থাকে।
চলন্ত সামাজিক গতিশীলতার সাংগঠনিক দৃঢ়তা : গতিশীলতা পর্যায়ের পরিস্থিতিতে সামাজিক গতিশীলতা তার পথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে গতিশীলতাকে অর্থবহ এবং সত্তাগত পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়। এক্ষেত্রে গতিশীলতার কারণগুলোকে ব্যাখ্যা করলে এর কাঠামো সম্বন্ধে জানা যায় এবং কিভাবে তা পরিচালিত হয় তাও জানা যায়। আর এর মাধ্যমেই আমরা এর সাংগঠনিক
দৃঢ়তা সম্বন্ধে জানতে পারব।
১. মুক্ত ও প্রতিযোগিতাময় সমাজে স্থবির সমাজের তুলনায় সামাজিক গতিশীলতা বেশি হয়। যে সমাজে নবীনদের সৃজনশীল কাজকর্মে উৎসাহিত করে, সেখানে গতিশীলতা বেশি। এর বিপরীতমুখী সমাজে
শিকর। গতিশীলতা হবে কম। অর্থাৎ সমাজ মুক্ত (Free) নাকি বন্ধ (Closed) তার উপর নির্ভর করে সামাজিক পাগতিশীলতা। এখানে সমাজের কাঠামোর ধরনের উপর সামাজিক গতিশীলতা নির্ভরশীল। যদি কাঠামো Free এবং সুদৃঢ় হয় তাহলে প্রতিশীলতার প্রক্রিয়াটিও সফলভাবে পরিচালিত হয়।
২. শিল্পায়ন ও নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় সমাজে ব্যাপক বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে হবে, তাহলে গতিশীলতার প্রক্রিয়া সুদৃঢ় হবে এবং গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। জাতি, শিক্ষা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমূলক শিক্ষা সামাজিক গতিশীলতাকে বাড়িয়ে দিয়ে গতিশীলতার সাংগঠনিক দৃঢ়তার ভিতকে আরো শক্ত করে থাকে।
৪. বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব (Extrovert personality) সামাজিক গতিশীলতার আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ। বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের লোক বাইরের জগৎ সম্পর্কে উৎসাহী এবং যে কোন ঝুঁকি গ্রহণ করে জীবনে প্রতিষ্ঠা আনতে তৎপর থাকে। অথচ ঘরকুনো স্বভাবের লোক বাড়ি ছেড়ে ঝুঁকি গ্রহণ করে কোন কাজ বা পেশা গ্রহণে আগ্রহ দেখায় না। এরা অন্তর্মুখী (Introvert) ব্যক্তিত্বের লোক। এদের জীবনে ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতা খুবই কম লক্ষ্য করা
যায়। এরা জীবনে সাধারণ আনুভূমিক গতিশীলতা আনয়ন করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ সামাজিক গতিশীলতার সাংগঠনিক ভিত মজবুত করতে হলে বহির্মুখী স্বভাবের লোক সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অলসতা তথা কর্মবিমুখতা কারো জন্য নিম্নগামী গতিশীলতা আনয়ন করে। এ অবস্থায় সে তার বর্তমান মর্যাদা হারায়। আমাদের দেশের অনেক অলস, অথর্ব লোক বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে এদের জীবনে নেমে এসেছে নিম্নগামী গতিশীলতা। বস্তুত সামাজিক গতিশীলতার পথ জ্যান্তকার উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করতে হলে সৎ, দক্ষ, পরিশ্রমী ব্যক্তির প্রয়োজন খুব বেশি ছিল না এমনকিছু পেশা আছে যা সামাজিক গতিশীলতা আনয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসার ক্ষেত্রে এ সুযোগটি রয়েছে সবচেয়ে বেশি। কিছু কিছু চাকরিতে দ্রুত প্রমোশনের ব্যবস্থা থাকে। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে শিক্ষাকে সামাজিক গতিশীলতার সাংগঠনিক দিকের ভিত্তি বলা হয়। এ পর্যায়ে শিক্ষিত ব্যক্তি
কর্মজীবনে চাকরি বা ব্যবসায় যাই করুক না কেন, অসমতা বা স্তরবিন্যাস তার নিকট হার মানবেইচ চা। সুতরাং গতিশীলতার সাংগঠনিক দৃঢ়তা বলতে সৈসব উপাদানকে নির্দেশ করা হয়,
যার উপর ভিত্তি করে সমাজ। পরিবর্তন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সেসব বিষয়ের দৃঢ়তাই সামাজিক গতিশীলতার সাংগঠনিক দৃঢ়তা
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক অসমতায় গতিশীল প্রক্রিয়া সমাজকে উঁচুনিচু শ্রেণিতে বিভক্ত করে থাকে। যদি সামাজিক গতিশীলতার সাংগঠনিক দৃঢ়তা বিরাজমান থাকে, তাহলে সমাজের অসমতাগুলো বৃদ্ধি না পেয়ে বরং সমাজের স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা আসবে বলে ধারণা করা হয়।