অথবা, লিঙ্গগত বৈষম্য কীভাবে সামাজিক অসমতা সৃষ্টি করে? সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, লিঙ্গভেদে সামাজিক অসমতা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, সামাজিক অসমতা সৃষ্টিতে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবসমাজে সবসময়ই সামাজিক অসমতার অস্তিত্ব বিরাজমান ছিল। সামাজিক অসমতা হচ্ছে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাঝে অসাম্যের অস্তিত্ব। একই সমাজে বসবাস করেও সবাই একই মর্যাদাধিকারী হয় না কিংবা একই ধরনের আর্থরাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে না। সামাজিক অসমতা মর্যাদা, ক্ষমতা ও সম্পদ ইত্যাদির অসম বণ্টনকে রক্ষা করে। সমাজের বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, সব সমাজেই কোনো না কোনোভাবে অসমতা বর্তমান থাকে। অসমতার মাত্রায় তারতম্য হতে পারে। তবে একেবারে বৈষম্যহীন সমাজ অস্তিত্বহীন।
লিঙ্গভেদে সামাজিক অসমতা (Social inequality by sex) : প্রাকৃতিক তথা জৈবিক পার্থক্য বিচারে সব মানুষ পুরুষ ও মহিলাতে বিভক্ত। মহিলা-পুরুষে যে প্রভেদ বা অসমতা তা মানবসৃষ্ট নয়। অথচ মানবসমাজে এটাই প্রথম ও মৌলিক প্রভেদ বা অসমতা। এ অসমতার মূল কারণ এই যে, মহিলারা সন্তান ধারণ করে, সন্তানদের দুগ্ধপান করায় এবং
শিশু লালনপালনে তাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি স্বীকার্য। সন্তান জন্মদান ও লালনপালন করতে হয় বিধায় মহিলারা গৃহের কাজেই আটকে পড়ে। শিকারি সমাজে দেখা যায়, পুরুষেরা শিকারের কাজে বাইরে ব্যস্ত। মহিলারা ধারে কাছের বাগান থেকে ফলমূল, পানি ও জ্বালানি সংগ্রহ ও রান্নার কাজে ব্যস্ত। শারীরিক শক্তি ও সামর্থ্যের ভিন্নতার কারণে পুরুষ ভারী কাজে অংশ নেয় এবং মহিলারা তুলনামূলক হালকা কাজে অংশ নেয়। এভাবে পুরুষেরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ, শিকার, পশুপালন, সমুদ্রে মাছ ধরা, নৌকা চালানো এবং হালচাষ ইত্যাদি কাজ করে। পুরুষদেরই সরকার পরিচালনা করতে হয়। যদিও কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে তাও নগণ্য। অধিকার কর্তব্য সংক্রান্ত বিচার কাজ প্রধানত পুরুষরাই করে থাকে। গৃহে বা সভাসমিতিতে পুরুষরাই নেতৃত্ব দেয়। এমনকি অধিকাংশ সমাজেই একজন অবিবাহিত মহিলার অভিভাবক হচ্ছেন পুরুষ। বিবাহিত হলে স্বামী। এর বিপরীত রীতি একান্তই কম। কোনো মহিলার অভিভাবক হিসেবে কোনো পুরুষ স্বামী হচ্ছে তার রক্ষক এবং মহিলাদের অনেক কাজের কৈফিয়তই পুরুষকে দিতে হয় অভিভাবক হিসেবে। এ কারণেই সহজ-সরল প্রযুক্তিনির্ভর ক্ষুদ্রাকৃতির সমাজসহ অনেক সমাজেই মহিলারা যেন Minor (গৌণ)। প্রায় সমাজেই পুরুষরা ধর্মীয় কাজে নেতৃত্ব দেয় বা পূজা বা অর্ঘ্য প্রদান করে। কোনো কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মহিলাদের অংশগ্রহণও সীমিত। অবশ্য কিছু সমাজে এমন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আছে যাতে কেবল মহিলারাই যোগ দেয়। এমন সমাজের অভাব নেই যেখানে মহিলারা পুরুষের সাথে আহারে বসে না বা বসার অধিকার প্রচলিত নেই। স্বামী বা বাড়ির পুরুষ ব্যক্তিদের আহার শেষ না হলে মহিলারা আহার করে না। মহিলাদের কাজের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম সমাজেই স্বীকার করা হয়, যদিও তারা সকাল-সন্ধ্যা এবং প্রয়োজনে মধ্যরাত অবধি কাজ করেন একই পরিবারের উন্নতির লক্ষ্যে। অথচ, নানাদিক থেকে তাদের মর্যাদা পুরুষের নিচে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্ত্রী-পুরুষভেদে বা লিঙ্গভেদে সামাজিক অসমতা সৃষ্টি হয়। এর জন্য জৈবিক কারণ ছাড়াও সমাজ ও সংস্কৃতির কিছু নিয়মরীতি, সংস্কার ও মূল্যবোধও অনেকটা দায়ী বৈকি।