সামাজিকীকরণে ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর।

—–সামাজিকীকরণে ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ধর্মের ভূমিকা বিশদভাবে উল্লেখ কর।
অথবা, সামাজিকীকরণে ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিকীকরণে ধর্মের অবদান বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূনিকা : সামাজিকীকরণ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। শিশুর জন্মের পর থেকে সামাজিকীকরণ প্রক্রি চলতে থাকে। এটা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত কোনো ফল নয়। এটা মানুষকে অর্জন করতে হয়। মানুষ যখন জন্মলাভ করে, তখন তা
মধ্যে সমাজ ও সংস্কৃতি বলে কোনো চেতনা থাকে না। ক্রমান্বয়ে শিশু সমাজস্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংস্পর্শে আসে এবং তাদে দ্বারা শিশুর মানসিকতা গড়ে উঠে এবং তার ব্যক্তিত্ব বিকাশ লাভ করে। সমাজের সাথে ব্যক্তির এ অভিযোজন ও ব্যক্তিজ বিকাশের প্রক্রিয়াই সামাজিকীকরণ হিসেবে পরিচিত। বহু দল ও প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে। এগুলোে
বলা হয় সামাজিকীকরণের মাধ্যম। ব্যক্তির সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলোর মধ্যে গরিবার ও ধর্মের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । সামাজিকীকরণে ধর্মের ভূমিকা : সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা অপরিসীম। দোলনা থেকে কর
পর্যন্ত মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা ও আচার আচরণ চর্চার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। নিম্নে সামাজিকীকরণে ধর্মের ভূমিক আলোচনা করা হলো :
১. শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন : ধর্মের মূল কাজ হলো সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ, নীতি ও আদর্শের বৈধকরণ । ধর্মে বর্ণি
■ মূল্যবোধের আলোকে শিশুর সামাজিকীকরণ হলে তার মধ্যে সহজ, সুন্দর ও ভদ্রজনোচিত ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। হয়। এ ধারণার জন্যই তার মধ্যে অসামাজিক আচরণ থেকে বিরত থাকার প্রবণতা ও মানবীয় আচরণের বিকাশ ঘটে। ধর্ম২. সামাজিক সংহতির ধারণা লাভ : ধর্ম মানুষে মানুষে বৈষম্য বা ভেদাভেদ দূর করতেও বিরাট ভূমিকা পালন
করে। একই ধর্মের মানুষ সে যে জাতি, বর্ণ বা ভাষারই হোক না কেন তারা সবাই একে অপরের প্রতি ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ। শৈশবকাল থেকে সামাজিক ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সকল শ্রেণির লোকের সাথে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে একত্রিত
হয়ে আচার আচরণ পালনের সাথে সাথে শিশুমনে সামাজিক সংহতির ধারণা জন্মে, যা জাতিগঠন ও উন্নয়নমূলক কাজে উৎসাহিত করে।
৩. নৈতিক মানসিকতার সৃষ্টি : ধর্ম হচ্ছে একটি আদর্শ বা জীবনদর্শন। অধিকাংশ ধর্মেই অদৃশ্য বা অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস স্থাপন মূল নীতিমালা হিসেবে স্বীকৃত হয়। শৈশবকাল থেকেই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় শিশুর মাঝে অতিপ্রাকৃত
বিশ্বাসের ধারণা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করে। পরিবারে বাবা-মা কিংবা ধর্মীয় শিক্ষকদের কাছ থেকে এ বিশ্বাসের ভিত্তিমূল প্রোথিত হয় এবং শিশুর আচার আচরণ ও কাজকর্মে অদৃশ্য অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রতি ভীতির প্রবণতা ফুটে উঠে
এবং শৈশবকাল থেকেই শিশুর মনে নৈতিকতাবোধের সৃষ্টি হয়। ধর্মের কারণে সৃষ্ট নৈতিকতাবোধ হতে শিশু অন্যায় বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে।
৪. শিশুমনে ব্যাখ্যাদানের ক্ষমতা সৃষ্টি : শিশু এমন কিছু বিষয় বা সমস্যার সম্মুখীন হয় যে, সহসা তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। কখন, কেমন করে, কার নির্দেশে বিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি হলো, কি উদ্দেশ্যে মানুষ এ পৃথিবীতে এসেছে
এসর প্রশ্ন শিশুমনকে ভাবনায় ফেলে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর অতিপ্রাকৃত চিন্তার জবাব প্রদান করে, যার ফলে সে জীবন জিজ্ঞাসার অনেক ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা প্রদান করা শিখে, যা তার সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে সহায়তা করে।
৫. আদর্শ বিশ্বাস ও জীবনধারার উপর প্রভাব : ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনব্যাপী ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাব প্রতিক্রিয়া প্রবলভাবে প্রতিপন্ন হয়। সামাজিক রীতি অনুসারে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। শিশু তার পিতামাতা ও অন্যান্য স্বজনদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আচার- অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে দেখে, পরিবারের শিশু সদস্যরা বয়োজ্যেষ্ঠদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করতে দেখে ও শোনে।
এসব বিষয় শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনকে প্রভাবিত করে এবং পরবর্তীতে তার আদর্শ বিশ্বাস ও জীবনধারা সে অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার শিশুকে সমাজজীবনের সাথে অভিযোজনের উপযোগী করে
গড়ে তুললেও শিশুর নৈতিক বিকাশ ও জীবনাচরণে সংযমী হওয়ার শিক্ষা শিশু ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুশাসনের মাধ্যমে লাভ করতে পারে। সুতরাং সামাজিকীকরণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ ও অনস্বীকার্য। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য মাধ্যমগুলো ক্রিয়াশীল থাকলেও ধর্ম শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পাদন করে।