সামাজিকীকরণের উপাদানসমূহ কী কী? আলোচনা কর।

সামাজিকীকরণের উপাদানসমূহ কী কী? আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিকীকরণের উপাদানসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিকীকরণের উপাদান সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিকীকরণের উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিকীকরণ হচ্ছে অন্যতম সামাজিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ সামাজিক বিধিসম আচরণ শেখে এবং এরই দ্বারা মানুষ সমাজের সদস্যরূপে গড়ে উঠে। প্রধানত পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মহল্লা,
সংগঠনের মাধ্যমে সামাজিকীকরণ সম্পন্ন হয়ে থাকে।
সামাজিকীকরণের উপাদান : সামাজিকীকরণ জন্মসূত্রে প্রাপ্ত কোনো ফল নয়। এটি মানুষকে অর্জন কর = হয়। এজন্য বলা হয় পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, তরুলতা সহজেই তরুলতা, কিন্তু মানুষ সামাজিকীকরণের মাধ্য
সামাজিক মানুষে পরিণত হয়। প্রতিটি বস্তু বা প্রক্রিয়া আমরা যাই বলি না কেন, কিছু উপাদান দিয়েই এর গঠন প্রক্রিয় সমাপ্ত হয়। মানবদেহ যেমন রক্ত, মাংস, পানি ইত্যাদি দিয়ে গঠিত তেমনি সামাজিকীকরণও কিছু উপাদান দিয়ে গঠিয়
নিম্নে সামাজিকীকরণের উপাদানসমূহের বিবরণ দেওয়া হলো :
১. অনুকরণপ্রিয়তা : শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের কথা বলার ভঙ্গিসহ আশেপাশের অনেক কিছুই অনুকরণ কর শিখে। অনুকরণের মাধ্যমেই শিশুর সামাজিকীকরণের সূচনা হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের কথা বলা, কাজ করার প্রচি
রীতিগুলোও সে অনুকরণ করে। এভাবে শিশুরা বয়স্কদের কাছ থেকে নানা রকমের আচার-আচরণ শিখে থারে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশু যখন প্রথম কথা বলতে শিখে তখন দেখা যায়, শিশুর মাতাপিতা শিশুকে আম্মু কিংবা অ
বলে সম্বোধন করে এবং শিশুটিও তা অনুকরণ করে মাকে আম্মু কিংবা পিতাকে আব্বু বলে ডাকে।
২. শিক্ষণ : শিক্ষণ এমন একটি Process যার মাধ্যমে কৃষ্টির উপাদান বিভিন্ন যুগে সঞ্চালিত হয়। মনোবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, মূলত ব্যক্তির শিক্ষণের ক্ষেত্রে চারটি বিষয় আবশ্যক। এ চারটি সম্পৃক্ত উপাদানের সাহা
মানুষের শিক্ষা সম্পন্ন হয়। এগুলো হচ্ছে-
১. তাড়না (Drive);
২. সংকেত (Cue);
৩. প্রতিক্রিয়া (Response);
৪. পুরস্কার (Reword)।
সামাজিক জীবে পরিণত হয়। তাই learning ছাড়া ব্যক্তির Socialization হয় না। মানুষ সামাজিক পরিবেশ থেকে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্য
সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে স্নেহ, ভালোবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। কেননা স্নেহ, ভালোবাসা
৩. আবেগপ্রবণতা : Affection হচ্ছে মানুষের দৈহিক, মানসিক সব দিকের সংবেদনশীল মানসিকতার প্রকাশ সামাজিকীকরণ হতে পারে না। তাই শুধুমাত্র পরিবার পর্যায়েই নয় জীবনের সর্বস্তরে স্নেহ, ভালোবাসার মধ্য ।
সামাজিকীকরণ চলছে। তবে অনেক সময় স্নেহ, ভালোবাসার আধিক্য anti social হিসেবে কাজ করে। ব্যতী৪. মিথক্রিয়া : মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে সম্পর্ক ও সহযোগিতা যা. বিনিময়ের মাধ্যমে গড়ে উঠে। পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যতীত
সামাজিকীকরণ হতে পারে না। প্রত্যেক মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এজন্য বলা হয় Man cannot live
alone. সামাজিকীকরণের পারস্পরিক ক্রিয়া চার প্রকার। যথা :
১. প্রতিযোগিতা (Competition);
২. দ্বন্দ্ব (Conflict);
উপযোগ (Accomodation);
৪. সংমিশ্রণ (Assimilation)।
পারস্পরিক সম্পর্কটা আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এ ‘মিথস্ক্রিয়া আমাদের সহজাত => প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে। মিথস্ক্রিয়া এর ফলে মানুষ/ব্যক্তি বুঝতে পারে যে, সে সমাজের একটি অংশ।
আমরা সমাজের মধ্যে যেভাবে পরস্পরের সাথে একত্রিত হচ্ছি সেটি সম্ভব হচ্ছে মূলত মিথস্ক্রিয়া এর মাধ্যমে।
৫. ভাষা : ভাষা হচ্ছে সামাজিকীকরণের প্রধান উপাদান। ভাষার মাধ্যমে আমরা ভাবের আদানপ্রদান করছি। ভাষার মাধ্যমেই কথোপকথন হচ্ছে। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করি এবং এ
অভিজ্ঞতাসমূহ ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করি। ভাষা হচ্ছে সামাজিকীকরণের বাহন। সাংস্কৃতিক প্রতীকসমূহকে যথাযথভাবে অনুধাবনের জন্য ভাষাই একমাত্র প্রক্রিয়া। ভাষার মাধ্যমেই মানুষ তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এককথায় জীবনের সবদিকই প্রকাশ করছে এবং ভাবের আদানপ্রদান করছে।
৬. সহানুভূতি : Sympathy ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এজন্য শিশুরা অন্যের আবেগ,ও উদ্দেশ্যকে বুঝতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় হতাশা ও ব্যর্থতায় মানুষ স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে যায়। তখন
কেউ তার প্রতি সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে আসলে সে সহজ সুন্দর জীবনে ফিরে আসে।
৭. অভিভাবন : অভিভাবনের মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিকীকরণ হয়ে থাকে। এ জটিল পৃথিবীতে ব্যক্তি অনেক সময় কর্তব্য জ্ঞান হারিয়ে ভুল পথে পা বাড়ায় তখন তার অভিভাবকের দরকার হয়। এর মাধ্যমে সে তার কর্তব্য সম্পর্কে
সচেতন হয়ে সহজ সুন্দর পথে ফিরে আসে। এভাবে অভিভাবনের মাধ্যমে ব্যক্তির Socialization হয়। শিশু যখন থেকে কথা বলতে ও অন্যের কথা বুঝতে শুরু করে তখন থেকেই অভিভাবনের মাধ্যমে তার সামাজিকীকরণ শুরু হয়। পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে শিশুর অভিভাবন শুরু হয়। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, কাকে কি বলে সম্বোধন করতে হবে, কার সাথে কি আচরণ করতে হবে এসব কিছু পরিবারের সদস্যরা অভিভাবনের মাধ্যমে শিশুকে শিখিয়ে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনের প্রতিটি স্তরে সামাজিকীকরণের উপাদানগুলো বিদ্যমান। পরিবারের সদস্যদেরকে অনুকরণের মাধ্যমে শিশুর সামাজিকীকরণ শুরু হয়
এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অনুকরণ ও শিক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তির সামাজিকীকরণ চলতে থাকে। এজন্য সামাজিকীকরণকে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া বলা হয়। মানবজীবনে প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, সহানুভূতি, আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ এসবওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এসব দ্বারা ব্যক্তির সামাজিকীকরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। এজন্য বলা যায়, সামাজিকীকরণ সমাজের প্রতিটি অবয়বের সাথে যুক্ত।