সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ লিখ।

অথবা,সাক্ষাৎকার পদ্ধতির পাঁচটি সুবিধা লিখ ।
অথবা, সংক্ষেপে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সুবিধাসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির কী কী সুবিধা রয়েছে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে সাক্ষাৎকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী কৌশল হিসেবে স্বীকৃত। এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাবলি সন্তোষজনকভাবে নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে । এ পদ্ধতির একাধিক যেমন সুবিধা রয়েছে, ঠিক অন্যদিকে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে ।
সাক্ষাৎকারের সুবিধাসমূহ : নিম্নে সাক্ষাৎকারের সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. উচ্চহারে উত্তরলাভ : সাক্ষাৎকার কৌশলের ক্ষেত্রে সাক্ষাগ্রহণকারী ব্যক্তিগতভাবে গবেষণার ক্ষেত্রে গিয়ে
উত্তরদাতাদের সাথে মিলিত হন এবং পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করেন। ফলে এ কৌশলের সাহায্যে উচ্চহারে উত্তর লাভ করা যায়। এছাড়া নিরুত্তরজনিত সমস্যাও অনেক
২. অক্ষমদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ : সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, সহায়তা (Assist) না করলে যারা তথ্য সরবরাহ করতে অসমর্থ হন। যেমন- শিশু, অশিক্ষিত, অন্ধ ব্যক্তি প্রমুখ এই শ্রেণির অন্তর্গত। কিন্তু সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাদের নিকট থেকে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করা যায় । কমানো যায় ।
৩. অনিচ্ছুকদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ : প্রতিটি সমাজে এমন কতিপয় ব্যক্তি রয়েছে, যারা উত্তর প্রদানে একবারেই অনিচ্ছুক। সম্ভবত তারা নিজেদেরকে উচুস্তরের লোক বিবেচনা করেন এবং তাদের কাছে প্রেরিত প্রশ্নমালার জবাব দিয়ে সময় নষ্ট করতে তারা রাজি নন। অথবা তারা মনে করেন যে, উত্তর দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই বা উত্তর সরবরাহের জন্য কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সাক্ষাৎকার কৌশলের সাহায্যে এরূপ অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের নিকট থেকেও সাক্ষাগ্রহণকারী প্রয়োজনীয় প্রেষণা প্রদান করে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন এবং গবেষণার মান উন্নত করতে পারেন ।
৪. সমস্যার গভীরে প্রবেশ করা সম্ভব : সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় সাক্ষাগ্রহণকারী এবং উত্তরদাতা উভয়েই সামনাসামনি উপস্থিত হয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। অধিকন্তু দক্ষ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং শিক্ষিত সাক্ষাগ্রহণকারী সমস্যাবলির অপেক্ষাকৃত গভীরে প্রবেশ করে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন ।
৫. আড় পরীক্ষার সম্ভাবনা : একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাক্ষাৎগ্রহণকারী কেবল উত্তরদাতার সাথে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেই সন্তুষ্ট হন না বরং উত্তরদাতা পরিবেশিত তথ্য সঠিক কি না তা জানার জন্য আড় প্রশ্নের সহায়তা গ্রহণ করেন। আর এটি কেবল সাক্ষাৎকার কৌশলের মাধ্যমেই সম্ভব হয়।
৬. নমনীয়তা : উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার কৌশলের অধিক নমনীয়তা লক্ষ করা যায়। এখানে উত্তরদাতা কোন প্রশ্ন বুঝতে অসমর্থ হলে তার বুঝার সুবিধার জন্য সাক্ষাগ্রহণকারী প্রশ্নটি ঘুরিয়ে বা নতুন শব্দ বিন্যাসের মাধ্যমে পুনরায় প্রশ্ন করে উত্তরদাতার নিকট থেকে সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। পর্যবেক্ষণ কিংবা ডাক প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় না ।
৭. আবেগ, অনুভূতি ও ভয় উপলব্ধি করা সম্ভব : সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য উত্তরদাতার সাথে আলোচনাকালে কখনো কখনো উত্তরদাতা আবেগপূর্ণ এবং উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আবার নিজের মনের ভয়ের অনুভূতির জন্য অনেক সময় উত্তর দিতে ইতস্তত (Hesitant) করেন। এমনকি কখনো কখনো ঘটনা বা অবস্থা অতিরঞ্জিত (Exaggerate) করে বা অবমূল্যায়ন (Underestimate) করে বর্ণনা করেন। সাক্ষাৎকারের কৌশলে র মাধ্যমে উত্তরদাতার এরূপ মানসিক অবস্থা ভালো করে উপলব্ধি করে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাক্ষাৎকার পদ্ধতিটি বৈজ্ঞানিক সমাজ অনুসন্ধানে তথ্য সংগ্রহের একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি । সাক্ষাৎকার একটি প্রাচীনতম কৌশল হলেও আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্বের অধিকাংশ সমাজ গবেষণার প্রাসঙ্গিক তথ্য সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোক গণনায় ব্যবহৃত সাক্ষাৎকার একটি চমৎকার উদাহরণ ।