অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব কী?
অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব কাকে বলে?
অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির ফলে পৃথিবীর প্রতিটি জাতি একে অপরের অত্যন্ত কাছাকাছি। এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ঘটা স্বাভাবিক। আবার সমাজে বিভিন্ন মানুষের চিন্তায়, কাজে, আদর্শে, আচরণে, মূল্যবোধে ও মূল্যায়নে পার্থক্য থাকা খুবই স্বাভাবিক। তাই এ পার্থক্য কখনো ব্যক্তিস্বার্থ, কখনো দল, কখনো বা ধর্মীয় কারণে হয়ে থাকে। এসব পার্থক্যের কারণে সমাজ যখন একজন অন্যজনের উপর প্রাধান্য লাভের চেষ্টা করে তখনই দেখা দেয় এ সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ।
সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব : সংস্কৃতি হলো A way of life. ব্যক্তির শিক্ষা, বিচারবুদ্ধি, আচারপ্রথা, রীতিনীতি, ধ্যানধারণা, বিশ্বাস প্রভৃতির মার্জিত ও সংস্কৃত রূপই হলো সংস্কৃতি। আবার যখন কোন সমাজের গতানুগতিক রীতিনীতির সাথে নতুন কোন রীতিনীতির প্রবেশ ঘটে তখন যে অসংগতির সৃষ্টি হয় তাকে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বা Cultural conflict বলে। যেমন- ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমশাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইসলাম ধর্মাবলম্বী সাংস্কৃতিক ধারা এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাংস্কৃতিক ধারার সম্মুখীন হয়। এ দুটি সাংস্কৃতিক ধারা উভয় সম্প্রদায়ের নিকট পরস্পর বিরোধী বলে প্রথম থেকে গণ্য হয়ে আসছে। ফলে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। সংস্কৃতি মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত বলে মানুষের মূল্যবোধ যতই পরিবর্তিত হচ্ছে সংস্কৃতি ততই পরিবর্তিত হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে আগের সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে। সুতরাং কোন সামাজিক গোষ্ঠী যখন পুরাতন সাংস্কৃতিক প্রথাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় এবং পরিবর্তিত অবস্থার সাথে Adjust করতে পারে না তখনই শুরু হয় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। মোটকথা, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক সংস্কৃতির সাথে বিশ্বাস নির্ভর গ্রামীণ সংস্কৃতিমনারা একাত্ম হতে না পারলে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয় । Karl Marx এর মতে, পৃথিবীর যাবতীয় কার্য দু’ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। যথা :
১.মৌল কাঠামো (Basic structure) এবং উপরিকাঠামো (Super structure)।
২. মূলত মৌল কাঠামো হচ্ছে অর্থ ও উপরিকাঠামো হচ্ছে মানবজীবনের যাবতীয় কার্য ও রীতিনীতি। এ দু’টি মিলেই মানুষের সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন সময়ে.অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রবর্তিত আইন, প্রথা, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে সমাজে বিদ্যমান দুই শ্রেণীর যে দ্বন্দ্ব তাই সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব।
Marx শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিভিন্ন সমাজে বিদ্যমান শ্রেণীদ্বন্দ্বের অনিবার্য ফল হিসেবে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আদি সাম্যবাদী সমাজেই সর্বপ্রথম সংস্কৃতির উৎপত্তি এবং আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ ।
উপসংহার : MacIver বলেছেন, “Our culture is what we are, our civilization is what we use.” কাজেই সংস্কৃতি একটি জাতির ঐতিহ্য, প্রাণ। কিন্তু সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব দুটি ভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে অসংগতি সৃষ্টি করে, সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।