অথবা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব উল্লেখ কর।
অথবা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব কেমন?
অথবা, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আজকের বিশ্ব বিজ্ঞানের অবদান। আর এ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন মূলত আধুনিকায়নেরই ফসল । আধুনিকায়ন সমগ্র বিশ্বকে মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন করে দিয়েছে। মানবজীবনের সর্বস্তরে এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শিল্পকারখানার উন্নয়ন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, কৃষিতে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা আধুনিকায়নের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। সে গুহাবাসী মানব আজ সভ্যতার চরম শিখরে অবস্থান করছে আধুনিকায়নের প্রভাবে। তবে আধুনিকায়ন এর নির্দিষ্ট কোনো সীমানা নেই ।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব : নিম্নে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের প্রভাব আলোচনা করা হলো :
ক. শিক্ষাব্যবস্থা : সনাতন শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা হলো আধুনিকায়নেরই ফলশ্রুতি। মাদ্রাসা, মক্তব, গৃহ শিক্ষা প্রভৃতির পরিবর্তে আধুনিক সমাজে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
খ. মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ : বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র আধুনিকায়নের এসব মাধ্যমগুলো মানুষের মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে সংকীর্ণ গোষ্ঠী জীবনের বেষ্টনী থেকে বের করে এনে তাকে বিশ্বজনীন করেছে।
গ. অধিকার প্রতিষ্ঠার সহায়তা : আধুনিকায়ন মানুষকে সমাজ সচেতন করে তাকে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে।
ঘ. ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক দিক : আধুনিকায়নের ফলে সামাজিক পরিবর্তন এবং মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। বিজ্ঞানের প্রভাবে মানুষ তখন অনেক যুক্তিনির্ভর ধ্যানধারণা ও মূল্যবোধের প্রতি আস্থাশীল হয়েছে। এর ফলে আধুনিক সমাজের মানুষেরা ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার হতে অনেকটা মুক্ত হতে পেরেছে। সমাজে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন মূল্যবোধ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে জাতি ও ধর্মভিত্তিক মূল্যবোধের পরিবর্তে মানবিক মূল্যবোধের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের সকল সংকীর্ণ মনোভাব ভেঙে সেখানে নতুন বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে এবং ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান সম্প্রসারিত হয়েছে। আধুনিকায়ন ধর্মীয় অনুভূতি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিকায়ন বর্তমান বিশ্বের বৈপ্লবিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আধুনিকায়নের ছোঁয়া মানবজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রভাব ফেলছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ আমরা মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র বিশ্ব ভ্রমণ করতে সক্ষম হচ্ছি। প্রতি সেকেন্ডে আমরা সমগ্র বিশ্বের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতে সক্ষম হচ্ছি। লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কাজ মুহূর্তের মধ্যে উন্নত প্রক্রিয়ায় করতে সক্ষম হচ্ছি। বর্তমান বিশ্ব এখন যান্ত্রিক যুগে পরিণত হয়েছে, যা আধুনিকায়নের ফসল মানবজীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতি মুহূর্তে, এমনকি আচার আচরণ, কলাকৌশল, সবকিছুতেই আধুনিকায়নের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।