অথবা, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলন আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভাষা আন্দোলনই বাঙালি জাতীয়তাবাদ উন্মেষের ভিত্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম ধাপ। ভাষা আন্দোলন ছিল মূলত সাংস্কৃতিক আবরণে একটি আর্থসামাজিক আন্দোলন।
আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলন : নিচে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক বিবর্তন : ভাষা আন্দোলনের কারণেই বাঙালি জাতি অধিকার সচেতন ও আত্মসচেতন হয়ে উঠে এবং একের পর এক দাবি আদায়ের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়। এ আন্দোলনের পথ ধরেই ছাত্রদের ১১ দফা, শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ও ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়। এক পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে ৭১ এ স্বাধীনতার পথ সুগম হয়।
২. সামাজিক সচেতনতা : যদি ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিজয় সম্ভব না হতো, তাহলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ সম্ভব হতো না। জাতীয়তাবাদের বিকাশে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এক মাইলফলক। এর প্রমাণ হলো ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নিবার্চন ও ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম।
৩. অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন : ১৯৫২ সালে যখন রাষ্ট্রভাষার অধিকার পাওয়া সম্ভব হয়, তখন এ বলে বলীয়ান হয়ে পরবর্তীতে বাঙালিরা অধিকার সচেতন হয়ে উঠে। বাঙালিরা বুঝতে পারে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ ব্যতীত পাকিস্তানিদের নিকট হতে ন্যায্য পাওনা আদায় সম্ভব নয়।
৪. ভাষা আন্দোলন ও অর্থনৈতিক সচেতনতা : খুব বেশি জোর দিয়ে যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হবে ভাষা আন্দোলনই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের অন্যতম হাতিয়ার। কেননা এ আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতি অধিকার সচেতন ও আত্মসচেতন হয়। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে পারে, জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪, ৫৮, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০ এর আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ সালে বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ভাষা তথা সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভাষা আন্দোলন শুরু হলেও এর পিছনে নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণ বিদ্যমান ছিল। এজন্য আমরা বলতে পারি সাংস্কৃতিক আবরণে ভাষা আন্দোলন ছিল মূলত আর্থসামাজিক আন্দোলন।