সাঁওতালদের ধর্ম বিশ্বাস ও বিবাহ প্রথা লিখ ।

অথবা, সাঁওতালরা কোন ধর্মাবম্বী এবং তাদের বিবাহ ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সাঁওতালদের ধর্ম ও বিবাহ সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সাঁওতাল নামের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন সমাজ ও নৃবিজ্ঞানী বিভিন্ন গবেষণা করলেও কেউই স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। সাধারণত ‘সাঁওতাল’ পরগনার অধিবাসী বলে এদেরকে সাঁওতাল বলা হয় বলে অনেকের ধারণা।
সাঁওতালদের ধর্ম বিশ্বাস ও বিবাহ প্রথা : নিম্নে সাঁওতালদের ধর্ম বিশ্বাস ও বিবাহ প্রথা আলোচনা করা হলো :
ধর্ম বিশ্বাস : সাঁওতালদের শিক্ষিত সমাজে হিন্দুদের প্রধান প্রধান দেব-দেবীর প্রাধান্য বর্তমান। প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ফরমাইযের মন্তব্যে বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। বেগাভীল, গন্দি, কোল, কোরকো এবং সাঁওতাল প্রভৃতি উপজাতীয়দের আচার- ধর্ম ও ভাষার সংগে হিন্দুদের আচার-ধর্ম ও ভাষা এমনভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে তাদের বৈশিষ্ট্য অনেকটা পৃথক এবং এজন্য এরা এখনও আদিবাসী তথা উপজাতি হিসেবে পরিগণিত। সাঁতালদের দেবতার মধ্যে প্রধান হলো ‘মারাংবুরো’ । গ্রামের বা নিজেদের সকল প্রকার মঙ্গল অমঙ্গল মারাংবুবোর ইচ্ছায়ই ঘটে থাকে বলে সাঁওতালরা বিশ্বাস করে থাকে। এ কারণে তার উদ্দেশ্যে সাদা মোরগ ও সাদা ছাগল উৎসর্গ করে তাকে সন্তুষ্ট রাখতে হয়। তাছাড়া কোন উৎসব উপলক্ষে প্রচুর মদও মারাংবুরোর নামে উৎসর্গ করা হয়।
বিবাহ প্রথা : সাঁওতাল সমাজে একই গোত্রে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। এমনকি একই প্রধান গোত্রের উপগোত্রের মধ্যেও বিয়ে চলে না। সাঁওতালদের মধ্যে বর্তমানে তিন ধরনের বিয়ের প্রচলন রয়েছে। যথা : (ক) আসলি বিবাহ (খ) রাজারাজি এবং (গ) হুরকাটারা । সাধারণত ছেলেরা উনিশ-বিশ এবং মেয়েরা পনেরো-ষোলো বছর বয়সে বিয়ে করে থাকে। আসলি বিবাহ ছেলে এবং মেয়ের অভিভাবকদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে হয়ে থাকে। রাজারাজি বিয়েতে যুবক-যুবতীরা হাটে যায় এবং তারা নিজেদের মনের মানুষকে পছন্দ করে নেয়। পরবর্তীতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের
মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। আর হুরকাটারা বিয়েতে যুবক যুবতীরা জোর করে বিয়ে করে থাকে। এরূপ বিয়েতে যুবক তার পছন্দের মেয়েকে জোর করে সিঁদুর পরিয়ে দেয়। সাঁওতালদের সামাজিক নিয়মানুসারে কোনো যুবতীর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিলে সে মেয়ের আর অন্যত্র বিয়ে হতে পারে না। এরপর নিয়মানুসারে গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বিবাহ ও ধর্মের ক্ষেত্রে তারা ঐতিহ্যবাহী নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষার প্রসারের ফলে এদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ব্যাপক পরবর্তন লক্ষ্য করা যায়।