সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক কী আলোচনা কর।

অথবা, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস কতটা সম্পর্কযুক্ত আলোচনা কর ।
অথবা, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
সমাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে জানাই হলো সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক উদ্দেশ্য। তাই সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষভাবে সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করে। কোন একটা বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে না। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞান যেখানে একটি বিশেষ দিক নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু সমাজবিজ্ঞান সকল সামাজিক বিজ্ঞানকে নিয়ে আলোচনা করে থাকে।
সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক : সমাজবিজ্ঞানীর জ্ঞান ইতিহাসের জন্য বিশেষ ফলদায়ক হতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সমাজবিজ্ঞানী যে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন তার ফলাফল আগামী দিনের ঐতিহাসিকদের কাছে খুবই মূল্যবান বলে বিবেচিত হতে পারে। সমাজবিজ্ঞান এবং ইতিহাসের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। উভয়ের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো সমাজ। তাই উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নিম্নে সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে সম্পর্কগুলো আলোচনা করা হলো :
ক. একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল : ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে যথার্থ অনুধাবন করতে হলে সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলো সম্পর্কে জানতে হয়। তেমনি সমাজবিজ্ঞানের কোন বিষয় সম্পর্কে সুসংহত জ্ঞানার্জনের জন্য তথ্যনিষ্ঠ ইতিহাস জানতে হয়। তাই সামাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস একে অপরের উপর নির্ভরশীল
খ. উভয়ই তথ্যভিত্তিক : সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস উভয়ই তথ্যনির্ভর। ইতিহাসে অতীতের ঘটনাবলি পর্যায়ক্রমে লিপিবদ্ধ থাকে। সমাজবিজ্ঞানে লিপিবদ্ধ থাকে মানবসমাজের উৎপত্তি, প্রকৃতি ক্রমবিবর্তনধারা প্রভৃতির বিশদ বিবরণ ।
গ. সমস্যা সমাধানে নির্ভরতা : বিগত দিনের ঘটনাবলির ক্রমবিশ্লেষণ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকে। ইতিহাসের সমস্যা সমাজবিজ্ঞানের মাধ্যমে সমাধান করতে হয়। আবার সামাজিক ঘটনাবলিই ইতিহাসের বিষয়বস্তু। একটি অন্যটির উপর নির্ভর করেই নিজ নিজ কার্য সমাধা করে।
ঘ. অভিন্ন আলোচ্যবিষয় : সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ক যাবতীয় ঘটনা। ইতিহাসেরও আলোচ্যবিষয় অতীত ঘটনাবলি এবং সম্পর্ক। উভয় শাস্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণ হচ্ছে উভয় শাস্ত্র মানুষের জীবনব্যবস্থা, সমাজ, সভ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করে।
ঙ. উভয়ে মানবজীবনের সার্বিক দিক আলোচনা করে : সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, সমাধান, সমস্যার প্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। ইতিহাসও এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে। উভয় শাস্ত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণ হচ্ছে উভয় শাস্ত্র মানুষের জীবনব্যবস্থা, সমাজ, সভ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করে।
চ. পর্যালোচনার ক্ষেত্রে : সমাজবিজ্ঞানের মৌলিক ধ্যানধারণার ভিত্তিতে ইতিহাসের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করা যায়। বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণে সমাজবিজ্ঞানী যে গবেষণা কর্মপরিচালনা করেন তার ফলাফল আগামী দিনের ঐতিহাসিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজবিজ্ঞানের সাথে ইতিহাসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন তথ্য উদঘাটনে যেমন ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল তেমনি ইতিহাসও সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান ছাড়া চলতে পারে না। তাই পরিশেষে বলা যায় যে, উভয়েই মানবজীবনের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে বিধায় একে অন্যের উপর নির্ভরশীল ও সম্পর্কযুক্ত।