সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যক্তি সমাজকর্ম -আলোচনা কর।

অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেখ।
অথবা, সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া কী?
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া বলতে কী বুঝ?
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার ধারণা দাও।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ার পরিচয় দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : ব্যক্তিকে সমস্যামুক্ত করার জন্য ব্যক্তি সমাজকর্ম মক্কেলের সমস্যাকে কেন্দ্র করে তার সমাধান পদ্ধতি ও কৌশলসমূহ প্রয়োগ করে। মক্কেলের (Client) সমস্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশেষণ করে তার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান আশা করা যায়। অপরপক্ষে, এসব সার্বিক কার্যক্রম বিবেচনা করেই এ পদ্ধতিকে সমস্যা সমাধানের অন্যতম কৌশল বলে দাবি করা হয়।
সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যক্তি সমাজকর্ম : ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মনোসামাজিক সমস্যাসমূহ অনুধ্যানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সমস্যার স্বরূপ প্রকৃতি নির্ণয় করা হয়। পরবর্তীতে নির্ণীত সমস্যা কার্যকরীভাবে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সমাধান ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত কাঠামোর আওতায় ব্যক্তি ও তার পরিবারের সামাজিক ভূমিকা পালন ও অভিযোজন ক্ষমতা পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের প্রচেষ্টা গৃহীত হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে সমাধান ব্যবস্থার কার্যক্রম শুরু হয় ব্যক্তি সমাজকর্মীর সাথে সাহায্যার্থীর সাক্ষাতের শুরু হতে এবং ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার শেষ পর্যন্ত এটি চলতে থাকে।এ সম্পর্কে Davison (1979, 71) বলেছেন, “মনোসামাজিক অনুধ্যান ও সমস্যা নির্ণয়ের ন্যায় চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে সমাধান ব্যবস্থা (প্রক্রিয়া) ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধানের সার্বিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখতে এবং উদ্দেশ্যকে কার্যকরীভাবে অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক কৌশল হিসেবে কাজ করে।
M. N. Hussain and M. Alauddin এক্ষেত্রে বলেছেন, ব্যক্তি সমস্যা মোকাবিলার সহায়তা করার লক্ষ্যে পরিচালিত সার্বিক কার্যক্রম ও সেবাসমূহের সমষ্টিই হলো সমাধান ব্যবস্থা (প্রক্রিয়া)।
ড. আব্দুল হাকিম সরকার আরও ব্যাপকভাবে বলেছেন, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমাধান পরিকল্পনা এমন একটি ধাপ সেখানে একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোর আওতায় ব্যক্তি ও তার পরিবারকে সক্ষম করার জন্য প্রচেষ্টা গৃহীত হয় যাতে Client ও পরিবার সামাজিক ভূমিকা পালনের নির্বাচিত ক্ষেত্রগুলোর সাথে খুব ভালোভাবে উপযোজন করতে পারে।বৈজ্ঞানিকভাবে কোনো কর্মসম্পাদনের উপায়ের মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা সাপেক্ষে তাকে পদ্ধতি হিসেবে
আখ্যায়িত করা হয়, তার প্রতিটি বৈশিষ্ট্যই ব্যক্তি সমাজকর্মে বিদ্যমান রয়েছে। কেননা ব্যক্তি সমাজকর্ম সমসা সমাধানে সাহায্য করার জন্য সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এটি সমস্যা সমাধানের দীর্ঘ ও ধারাবাহিক কর্ম প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার পর্যায়গুলো পরস্পর অবিচ্ছেদ্য।পৃথকভাবে আলোচনা করা হলেও বাস্তব অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রক্রিয়াকে সমন্বিতভাবে সম্পৃক্ত করতে হয়।সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে ব্যক্তি সমাজকর্মে রয়েছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, সুনির্দিষ্ট কর্মনীতি; সুশৃঙ্খল স্তর ও সুপরিকল্পিত সাহায্যদান প্রক্রিয়া। এজন্য ব্যক্তি সমাজকর্ম অতিমাত্রায় গতিশীল। এখানে বিভিন্ন সমাধান পদ্ধতি ও কৌশলসমূহ প্রয়োগ করে সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান দেয়া হয়। ব্যক্তি সমাজকর্মে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে অন্যান্য সাহায্যকারী পেশাকেও তত্ত্ব ও কৌশলসমূহ সরবরাহ করে সাহায্য করে। নিম্নে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া হিসেবে এ পদ্ধতির যুক্তিযুক্ত দিকগুলো তুলে ধরা হলো :
১. সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সাহায্য করার জন্য সমাজকর্মীদের কতিপয় মৌলিক মানবিক আচরণ, সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক ভূমিকা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা ও বাস্তব জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
২. সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি হিসেবে ব্যক্তি সমাজকর্মের রয়েছে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট কর্মপ্রক্রিয়া। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর প্রথম সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়েই উক্ত প্রক্রিয়াটি শুরু হয় এবং সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে।
৩. সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে সুশৃঙ্খল উপায়ে সাহায্য করার জন্য ব্যক্তি সমাজকর্মীদের সর্বাবস্থায় কতকগুলো প্রভেদ ও সাধারণ মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। যেমন- ব্যক্তির মর্যাদার স্বীকৃতিমূলক নীতি,আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নীতি, অংশগ্রহণ নীতি ইত্যাদি।
৪. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের ফলে সমাজের যেসব পরিবর্তন সাধিত হয়, তাতে মস্যোর জটিলতা ও গল্পীরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এসব পরিবর্তনের সাথে অনেকেই নিজেকে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না।
৫. সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যার প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও ধরন অনুযায়ী ব্যক্তি সমাজকর্মে সাহায্যদানের সুনির্দিষ্ট কতকগুলো কৌশল রয়েছে। কখনো প্রত্যক্ষ সমর্থনমূলক পদ্ধতি আবার কখনো পরোক্ষ সমর্থনমূলক কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালানো হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতিটি সমস্যা সমাধানের একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এখানে সাহায্যার্থীর সমস্যার প্রকৃতি, সেবা গ্রহণে তার মনোবৃত্তি এবং সেবা প্রদানে এজেন্সির সম্পদ সামর্থ্য ও সমাজকর্মীর দক্ষতা প্রভৃতি নানাবিধ দিক বিবেচনা করে সাহায্যার্থীর সমস্যার কার্যকরী মোকাবিলায় সুব্যবস্থা ও সুপরিকল্পিত কাঠামো তৈরি করা হয়, যার দ্বারা ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা ও সামঞ্জস্য বিধানের ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটে। এভাবে ব্যক্তির সমস্যার সমাধান ব্যক্তি পর্যায়ে ত্বরান্বিত করেই সমাজের বৃহত্তর উপকার সাধন করা হয়।