অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানের আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, সমস্যা সমাধানের আনুসঙ্গিক বিষয়গুলো আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানের আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো কী কী? আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তুলে ধর।
উত্তর৷। ভূমিকা : যে বৈজ্ঞানিক ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণ করে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে তার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে থাকেন তাকে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া বলা হয়ে থাকে। সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া একটি ধারাবাহিক ও সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া সমস্যার বাছাই করা থেকে শুরু করে ফলোআপ (Follow-up) করা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ প্রক্রিয়ায সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কয়েকটি ধাপ বা স্তর অতিক্রম করতে হয়।
আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ (Relevant steps) : সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানে কতিপয় আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এই আনুষঙ্গিক পদক্ষেপক্ষেপকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা (Prognosis) : ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা নিরূপণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়কে সমস্যা সমাধান কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকাল বলা হয়। অর্থাৎ সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্যার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
(যেমন- উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা, উত্তেজনা, চাপ অনুভব ইত্যাদি) থেকে সাহায্যার্থীকে সাময়িকভাবে মুক্ত করার লক্ষ্যে যেসব ব্যবস্থা গৃহীত হয় সেগুলোকে Prognosis বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা বলে।সাধারণত সমস্যাগ্রস্ত কোন ব্যক্তি যখন এজেন্সির সাহায্যের জন্য আগমন করে তখন তার মধ্যে এক ধরনের চাপমূলক অবস্থা ও অস্বস্তি বিরাজ করে। এ অবস্থায় তার নিকট হতে পর্যাপ্ত তথ্যসংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়ে বা সমস্যা নির্ণয় ও সমাধান পরিকল্পনা তৈরিতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সাহায্যার্থীর মধ্যে সাময়িক স্বস্তিরভাব ফিরে আসে। তাই ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত সহজে বুঝার জন্য এই সাময়িক উপশমকারী ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
২. অনুসরণ (Followup): ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যার প্রকৃতি, সময়, পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে ব্যক্তির আচরণের ধরনও বদলে যেতে পারে। সমস্যার ক্ষেত্রে যে সমাধান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা মূল বিষয় বা ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনোভাব বা আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়া বিচিত্র নয়। তাই সমাধান ব্যবস্থার কার্যকারিতা অবলোকন ও যাচাই করার উদ্দেশ্যে ফলোআপ বা অনুসরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। সমাজকর্মে ফলোআপ বা অনুসরণ প্রক্রিয়াকে বিশেষ একটি পরিপূরক ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়। এই অবস্থা ব্যক্তির বাস্তব জীবনে উন্নতি বা অবনতির ধারা মূল্যায়ন এবং সে প্রেক্ষিতে নতুন সমাধান ব্যবস্থা সংযোজিত হয়।
৭. প্রেরণ (Referral) : সমস্যার প্রকৃতি বা কারণভেদে সাহায্যার্থীকে উপযুক্ত স্থানে বা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করার বিষয় সমাজকর্ম পেশার অন্যতম নীতি। ব্যক্তির সমস্যার গতিপ্রকৃতি দেখে তাকে অনেক সময় সমাজকর্মী অন্য প্রতিষ্ঠানেও প্রেরণ করতে পারেন। কারণ উক্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা সমাজকর্মীর নাও থাকতে পারে। কিংবা সমাজকর্মী যে প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন সে প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের উপকরণ নাও থাকতে পারে। প্রেরণের এই কাজটি কোন কোন সময় সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার শুরুতে অনুধাবন করা সম্ভব হয়। আবার কখনো তা নির্ণয় করতে বিলম্ব হতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মে সাহায্যার্থীর মনোসামাজিক সমস্যার ফলে সৃষ্ট অস্থায়ী সমস্যা সমাধানে সাহায্যার্থীকে সহায়তা করে। যেহেতু এখানে ব্যক্তির সমস্যাগুলো অধিকাংশই মনোসামাজিক প্রকৃতির, তাই এখানে সমস্যার কারণসমূহকে নির্ণয় সমস্যা সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি। তার প্রেক্ষিতে একটি কার্যকর সেবাদান ব্যবস্থা প্রস্তুত করা একান্ত জরুরি, যা আলোচ্য মূল বা প্রধান ও আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সহজেই সম্পাদন করা সম্ভব।