উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালাম বিরচিত ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে। উক্তিটি গহুরালির।
প্রসঙ্গ : গহুরালি কী কারণে তার দুই কুড়া জমি নতুন সড়কের জন্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রশ্ন প্রসঙ্গে স্ত্রী হাজেরাকে উল্লিখিত কথাটা বলেছে।
বিশ্লেষণ : মাউলতলা গ্রামের গহুরালি একজন দরিদ্র কৃষক। তার মাত্র পাঁচ কুড়া চাষের জমি। এই জমির আয়েই সে সংসারযাত্রা নির্বাহ করে। চল্লিশ বছর পর গ্রামে ফেরা জোনাবালি হাওলাদার গ্রামবাসীকে নতুন জীবনের স্বপ্নের কথা শোনাল। শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামবাসী তার কথায় চমৎকৃত হলো। জোনাবালি একটা নতুন রাস্তা তৈরি করে শহর বন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর প্রস্তাব দিলে প্রথমত অনেকেই রাজি হতে চাইল না। পরে নতুন জীবনের প্রত্যাশায় তারা নিজেদের জমি রাস্তার জন্য ছেড়ে দিতে সম্মত হলো। গহুরালিও প্রথমে দ্বিধান্বিত ছিল। তার স্ত্রী হাজেরারও আপত্তি ছিল জমি ছেড়ে দিতে। জোনাবালির যুক্তিতর্কের কাছে হার মেনে ভাগ্য বদলের দূরন্ত আশা নিয়ে গহুরালি তার পাঁচ কুড়া জমির দুই কুড়াই নতুন সড়কের জন্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাল হাজেরাকে। অল্পবয়সী হাজেরা আবারও আপত্তি জানালে গহুরালি উল্লিখিত উক্তির মাধ্যমে স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করল। তার মতে অতোশতো ভাবতে গেলে দেশের কাম করা যায় না। সকলের মঙ্গলের জন্য যে কাম তার জন্য সকলেরই কিছু কিছু ত্যাগ করার প্রয়োজন হয়। জোনাবালির শেখানো কথাগুলোই গহুরালি ভারিক্কী চালে স্ত্রীকে শুনিয়ে দিয়েছে।
মন্তব্য : দশজনের মঙ্গলের জন্য যে কাজ তার জন্য সকলেরই কিছু না কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।