শ্রমের মর্যাদা বলতে কী বুঝ?

অথবা, সমাজকর্মের একটি মূল্যবোধ হিসেবে “শ্রমের মর্যাদা” নীতি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজকর্মের একটি মূল্যবোধ হিসেবে “শ্রমের মর্যাদা” নামক মূল্যবোধটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজকর্মের মূল্যবোধ হিসেবে শ্রমের মর্যাদা ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
প্রতিটি পেশার ন্যায় সমাজকর্ম পেশারও কতকগুলো মূল্যবোধ রয়েছে। সমাজকর্মীদের এই মূল্যবোধ অনুসরণ করে কাজ করতে হয়। মূল্যবোধ সমাজকর্ম অনুশীলনের Guideline বা Principle হিসেবে কাজ করে।
সমাজকর্মে গণতান্ত্রিক অধিকার : সমাজকর্ম অনুশীলন সমাজকর্মীগণ কতকগুলো সাধারণ মূল্যবোধ অনুসরণ করেন।সমাজকর্মের এ সাধারণ মূল্যবোধগুলোর একটি হলো শ্রমের মর্যাদা।নিম্নে এ মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা হলো :
শ্রমের মর্যাদা (Dignity of labour) : পৃথিবীর সকল কার্যসম্পাদনের প্রথম হাতিয়ার হলো শ্রম।এ শ্রম হলো দিন
মজুরের, শ্রমিকের, পেশাজীবীর এবং সকল মানুষের প্রচেষ্টা।কার্যসম্পাদনের উদ্দেশ্যে সকল মানুষের প্রচেষ্টাই হলো শ্ৰম।তাই শ্রমের মূল্য ও মর্যাদা অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। মানুষের সুন্দর ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন গঠনের জন্য বিভিন্ন কাজকর্ম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হয়। এসব প্রচেষ্টাই হলো শ্রম।শুধু উন্নয়ন নয়, বরং মানবজীবনের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শ্রম বিনিয়োগ অপরিহার্য। রিকশাওয়ালার রিকশা চালানো, ড্রাইভারের গাড়ি চালানো, পাইলটের উড়োজাহাজ চালানো, শিক্ষকের পড়ানো, লেখকের লেখনী প্রয়াস, শ্রমিকের কারখানায় কাজ, কৃষকের কৃষিকাজ, চাকরিজীবীর অফিসিয়াল কাজ, মেথরের পয়ঃনিষ্কাশন এগুলো সবই শ্রম।সমাজে এসব শ্রমের কোনোটিরই গুরুত্ব কম নয়।মেথর পয়ঃনিষ্কাশন না করলে, ঝাড়ুদার ঝাড় না দিলে, নাপিত চুল না কাটলে শুধু শিক্ষিত চাকরিজীবীদের দ্বারা সমাজ চলবে না। জেলে যদি মাছ না ধরে, কসাই যদি মাংস বিক্রি না করে, দোকানদার যদি তরকারি বিক্রি না করে তাহলে মানুষ চলবে কি করে। কৃষকের কৃষিকাজ ছাড়া কারও পেটের আহার জুটবে না।আবার সভ্যতার বিকাশে চাকরিজীবী, বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের অবদানও কম নয়।সকল পেশাজীবীর সকল শ্রমই সমাজের কল্যাণের জন্য জরুরি। এ কারণে সকল ধরনের পেশা ও শ্রমের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাপোষণই হলো শ্রমের মর্যাদা।সমাজকর্মে সব ধরনের শ্রম ও পেশার প্রতি সমগুরুত্ব প্রদান করা হয়; কোনো
শ্রমকেই অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা হয় না। শ্রমের মর্যাদা ব্যতীত ব্যক্তির ও সমাজের মঙ্গল সম্ভব হয় না। যে জাতি শ্রমের প্রতি যত শ্রদ্ধাশীল সে জাতি তত উন্নত। শ্রমের যথার্থ মূল্যায়ন মানবিক মূল্যবোধের উৎকর্ষ সাধনের সহায়ক। এ কারণে সমাজকর্মে ‘শ্রমের মর্যাদা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও মূল্যবোধ হিসেবে স্বীকৃত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি জীবনের উন্নয়ন ও সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য শ্রমের মর্যাদার প্রভাব অপরিসীম। এ কারণে কোনো শ্রমকেই অবজ্ঞার দৃষ্টি দেখা উচিত নয়। সমাজকর্ম শ্রমের যথাযথ মর্যাদাদানে বিশ্বাসী।