শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক বর্ণনা কর।
অথবা, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার মধ্যে সম্পর্ক বর্ণনা কর।
অথবা, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা প্রত্যয় দু’টি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শিক্ষার প্রভাবে সমাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই সামাজিক গতিশীলতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অতএব একথা বলা যায়, শিক্ষা সামাজিক গতিশীলতার মূল চাবিকাঠি। এ শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতাকে মুদ্রার এপিট
ওপিট হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বস্তুত শিক্ষা ছাড়া যেমন সামাজিক গতিশীলতা আসে না, তেমনি সামাজিক গতিশীলতা ছাড়াও শিক্ষার ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার সম্পর্ক আলোচনা করার এনে পূর্বে প্রত্যয় দু’টি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা থাকা আবশ্যক ।
সামা শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার সম্পর্ক : মানবজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত ও মর্যাদার অবস্থানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার অবদান অনস্বীকার্য। আর এ শিক্ষাই সামাজিক গতিশীলতার একটি অন্যতম উপাদান। অতএব দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ। নিম্নে সংক্ষেপে শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতার মধ্যকার সম্পর্কগুলো আলোচনা করা হলো : পর্যা যাচে বিক আন হয়ে গতি
১. সামাজিক গতিশীলতা সুন্দর ও মাধুর্যমণ্ডিতকরণ ও শিক্ষা : মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞান, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এ শিক্ষাই সামাজিক গতিশীলতা ত্বরান্বিত করে সমাজকে সত্য, সুন্দর ও মাধুর্যমণ্ডিত করে তোলে। অতএব বলা যায়, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা পারস্পরিক সম্পর্কে সম্পর্কিত।
২. সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ : একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকরে। আর সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ফলে সমাজের গতিশীলতায়ও পরিবর্তন ঘটে। টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল প্রভৃতির আবিষ্কার ও ব্যবহার সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে
৩. সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধিকরণ ও শিক্ষা : বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই আজ মানুষ রেডিও,

  1. আধুনিকায়ন : শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ শিল্পায়ন ও নগরায়ণ ঘটিয়ে সমাজকে আধুনিক করছে। এর ফলে সমাজের
    মান উন্নত হচ্ছে, যা আধুনিকায়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরে নতুন নতুন শিল্পকারখানা ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠার ফলে মানুষের জীবনযাত্রার
    ৫. যোগাযোগ ব্যবস্থা : বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বে যেখানে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, নৌকা, ডাকযোগ প্রভৃতি ছিল যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম, বর্তমানে সেখানে বাস, ট্রাক, স্টিমার, ই-মেইল, ফোন, ফ্যাক্স, মোবাইল প্রভৃতি উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক গতিশীলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং বলা যায়, শিক্ষা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করে সামাজিক গতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করেছে।
    ৬. কুসংস্কার দূর করে সমাজকে গতিশীলকরণ ও শিক্ষা : শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানের আলো দান করে। এ শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। বস্তুত সুশিক্ষিত লোক মাত্রই সচেতন এবং তারা সমাজের অন্ধবিশ্বাস অর্থাৎ কুসংস্কার দূরীকরণে সর্বদা সচেষ্ট। ফলে সামাজিক গতিশীলতা ত্বরান্বিত হয় । সুতরাং বলা যায়, শিক্ষা সমাজের গতিশীলতা দূরীকরণ করে সমাজকে গতিশীল করতে সহায়তা করে।
    ৭. চিকিৎসা ক্ষেত্রে : বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে কলেরা, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সার প্রভৃতি মারাত্মক রোগও আজ মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
    ৮. শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা পরিপূরক : আদিমকালে মানুষ বন্যপশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ করে জীবিকানির্বাহ করত। এ সময় তারা সবকিছু কাঁচা খেত। কিন্তু কালক্রমে বিভিন্ন শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ আদিমকালের সে পর্যায়ে অতিক্রম করে বর্তমান পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মানুষ উৎপাদন ও ভোগ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন এনেছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা একে অপরের পরিপূরক।
    ১১. শিক্ষা সামাজিক গতিশীলতাকে গতিময় করে : শিক্ষা বিভিন্ন রকমের শিল্পের বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে সামাজিক গতিশীলতাকে গতিময় করে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মানুষ শৈল্পিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। আগে মানুষ যেখানে কুঁড়ের ঘর তৈরি করত এখন সেখানে বহুতল বিশিষ্ট অট্টালিকা তৈরি করছে। ফলে সামাজিক গতিশীলতা আনয়নে সমর্থ হয়েছে।
    ৯. নবজাগরণ : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণে এবং শিল্পের বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। ফলে মানবজাতির মধ্যে এক নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, যা সামাজিক গতিশীলতা আনয়নে সমর্থ হয়েছে। কা
    ১০. জীবনযাত্রার নতুনত্ব : শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ খাদ্য গ্রহণ, পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার ও চলাফেরায় নতুনত্ব এনেছে। যার ফলে সমাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জীবনযাত্রায় নতুনত্ব আসছে। সুতরাং শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
    উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা প্রত্যয় দু’টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শিক্ষা ছাড়া যেমন উন্নয়ন সম্ভব হয় না, তেমনি উন্নয়ন ছাড়াও সামাজিক গতিশীলতা আসে না। মূলত শিক্ষার মাধ্যমেই সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। কেননা শিক্ষা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সুশীল সমাজ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। সর্বোপরি বলা যায়, শিক্ষা ও সামাজিক গতিশীলতা পরস্পর গভীর সম্পর্কে সম্পর্কযুক্ত।