অথবা, শাস্তির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সংক্ষেপে ধারণা দাও।
অথবা, শান্তির সীমাবদ্ধতা দ্বারা কী বুঝায়? সংক্ষেপে বুঝিয়ে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজে অপাধের প্রতিবিধানের জন্য শাস্তির উদ্ভব হয়েছে। শাস্তি হলো মানুষের আরচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়। যেদিন থেকে পৃথিবীতে অপরাধের গোড়াপত্তন হয়েছে সেদিন থেকেই সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা তথা অপরাধ প্রশমনের জন্য কিছু নিয়মনীতি বা শাস্তি চালু হয়েছে।
শাস্তির সীমাবদ্ধতা : শাস্তির সীমাবদ্ধতা নিম্নে দেয়া হলো :
শাস্তি অপরাধীকে তার কার্যকলাপ গোপন করার জন্য তাকে সজাগ করে দেয়। অর্থাৎ শাস্তির ভয়ে অপরাধী তার কৃতকর্ম গোপন রাখে এবং মিথ্যার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শাস্তি ভোগ করার কারণে কোন কোন ব্যক্তি সমাজে ‘বীর’ হিসেবে আখ্যা পায়। শাস্তি ভোগের কারণে অপরাধের কুখ্যাত সমাজে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেক সময় কারাগার ত্যাগকারী দাগি আসামি সমাজে মূলত সবার ভয়ের এবং ঘৃণার পাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক সবাই বীর ব্যক্তি হিসেবে বা অসাধারণ সাহসী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করে। অতএব দেখা যায় যে, শাস্তি এক বিশেষ অর্থে অপরাধীর সামাজিক প্রভাব, প্রতিপত্তি বাড়িয়ে দেয়।শাস্তি অপরাধীকে কলঙ্কিত করে, সমাজ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অথচ সমাজ ছাড়া কেউ একা বাস করতে পারে না। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা ভোগের পর সমাজে খাপখাইয়ে চলতে বেশ কষ্ট হয়। শাস্তি অপরাধীর মধ্যে অসামাজিক ও হিংসাত্মক গুণাবলি জাগিয়ে তোলে এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন রাগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে যা আইন মেনে চলার পথে এক বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তার মধ্যে হতাশা ও হীনমন্যতা জাগে। প্রকৃত অপরাধী যদি প্রমাণের অভাবে সাজাপ্রাপ্ত না হয়, তবে সাময়িক শাস্তি ভোগের পর সে আরো বড় বড় ধরনের অপরাধ করতে পারে। সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী পরবর্তীতে আরো হিংসাত্মক ও প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে উঠে।শাস্তি সামাজিক সংস্কার আনয়নে ব্যর্থ হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে শাস্তি একজনকে হয়ত বাধা দিচ্ছে। কিন্তু একই ধরনের অন্যান্য অপরাধীরা এ অপরাধ করে চলে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শাস্তি অপরাধীকে অপরাধ কর্ম থেকে দূরে রাখার একটি প্রক্রিয়া হলেও তা অনেক সময় সবার জন্য সমান হয় না। কখনো কখনো শাস্তির জন্য অপরাধ আরো বেড়ে যেতে পারে। এসব সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শাস্তি যে অপরাধ দমনের অন্যতম হাতিয়ার একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।