অথবা, শাস্তির সংশোধনাত্মক মতবাদটি বিস্তারিত বর্ণনা কর।
অথবা, শাস্তির সংশোধানাত্মক মতবাদটি সম্পর্কে তুমি যা জান লিখ।
অথবা, শাস্তির সংশোধানাত্মক মতবাদটি আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষের বিচ্যুত আচরণের চরম পর্যায়কে অপরাধ বলে। অপরাধের নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় হচ্ছে শাস্তি। দেশে বিদ্যমান নানামুখী বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন অপরাধবিজ্ঞানী শাস্তি সম্পর্কে গবেষণা করে এর বিভিন্ন তত্ত্ব উৎঘাটন করেছেন। তাদের প্রদত্ত বিভিন্নরকম তত্ত্বের মধ্যে শাস্তির প্রতিরোধাত্মক, সংশোধাত্মক ও প্রতিশোধাত্মক মতবাদ অন্যতম।
সংশোধনাত্মক মতবাদ : এ মতবাদ অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো তার চরিত্রের সংশোধন করার জন্য তাকে শিক্ষা দেওয়া। এ মতবাদ অপরাধীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে। তার নীতিবোধের প্রতি শ্রদ্ধা
প্রদর্শন করে। অপরের কল্যাণের জন্য এ মতবাদ বিকল্প উপায় হিসেবে গণ্য করা হবে না। অপরাধী যাতে নিজের আচরণ সংশোধন করতে পারে তার জন্য অর্থাৎ অপরাধীর নিজের কল্যাণের জন্যই শাস্তি দেওয়া হয়। সুতরাং অপরাধীকে এমন শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে সে তার চরিত্র সংশোধন করার সুযোগ পায়। কোন সময় নানাবিধ অবস্থার চাপে পড়ে কিংবা ভুলবশত কিংবা রোগগ্রস্ত হয়ে অথবা রিপুর বশবর্তী হয়ে মানুষ অপরাধ করে।
এ মতবাদ অনুসারে অপরাধের প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করে অপরাধীর চরিত্র সংশোধনাত্মক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। কাজেই মানুষকে মৃত্যুদণ্ডরূপ চরম শাস্তি দেওয়া কিছুতেই সঙ্গত নয়। অপরাধ সম্পর্কীয় সমাজবিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্বে অনেক লেখক এ মতবাদকে সমর্থন করেন। ম্যাকেঞ্জি বলেন, “বর্তমান যুগের মানবোচিত মনোভাবের সঙ্গে এ মতবাদ সর্বাপেক্ষা সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে এ মতবাদকে বিশেষভাবে গ্রহণ করা হয়।” বর্তমান যুগে গ্রহণযোগ্য মতবাদ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। এ মতবাদের মধ্যে নিম্নোক্ত ত্রুটিগুলো লক্ষ করা যায় :
ক. এ মতবাদ অনুসারে হত্যার অপরাধে যে অপরাধী তাকেও চরম দণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া চলে না। কারণ, উক্ত শাস্তির দ্বারা অপরাধীর চরিত্র সংশোধনের কোনো প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে হত্যার অপরাধে অপরাধীকে চরম দণ্ড দেওয়া উচিত। অনেক সময় হত্যাকারীকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলে সমাজে এরূপ হত্যার সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
খ. এ মতবাদ অনুযায়ী অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয় তার চরিত্রের সংশোধনের জন্য। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ও সবসময় শাস্তির দ্বারা চরিত্র সংশোধিত হয় না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, উক্ত শাস্তি অপরাধীকে
অধিকতর কঠিন ও মারাত্মক অপরাধে অপরাধী করে তোলে।
গ. চরিত্রের সংশোধন করাই যদি শাস্তির উদ্দেশ্য হয়, তবে শাস্তির পরিবর্তে ক্ষমা এবং স্বহৃদয় ব্যবহার দ্বারা অপরাধীর মনে এ মনস্তাপ ও অনুশোচনার সৃষ্টি করে তার চরিত্রকে সংশোধন করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, শাস্তির ধরন অপরাধভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শাস্তি হলো আচরণ সংশোধনের উপায়। অপরাধীকে এমনভাবে শাস্তি প্রদান করা উচিত যাতে সে তার চরিত্র সংশোধনের সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড কখনো কাম্য নয়। শাস্তির সংশোধনাত্মক মতবাদীরা তাই মনে করেন।