অথবা, শরীয়ত ও মারেফতের সংজ্ঞা দাও ।
অথবা, শরীয়ত ও মারেফত কাকে বলে?
অথবা, শরীয়ত ও মারেফত সম্পর্কে ধারণা দাও।
অথবা, “শরীয়ত ও মারেফত সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সুফিবাদ ইসলামের বাতেনী বা অভ্যন্তরীণ দিককে গুরুত্ব সহকারে বিচার করে। মানুষের প্রাণ ছাড়া যেমন দেহ অসার, তেমনি ধর্মের অভ্যন্তরীণ ভক্তির দিক ছাড়া ধর্মীয় বিচার এবং অনুষ্ঠান মূল্যহীন। একজন সুফি.নিছক বাহ্যিক আচরণ এবং অনুষ্ঠান পালন করে একটি নির্দিষ্ট পথে চলে তার চরম লক্ষ্যে পৌছান। এই চরম লক্ষ্যে পৌছতে তাকে কিছু স্তর অতিক্রম করতে হয়। এই স্তরগুলোর মধ্যে শরীয়ত ও মারেফত অন্যতম।
শরীয়ত : একজন সুফির জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। সুফি পথ পরিক্রমার প্রথম পথ হলো শরীয়ত। শরীয়ত বলতে বুঝায় ইসলামি জীবনবিধান অনুযায়ী জীবন জাপন। ইসলামি শরীয়তের সকল হুকুম আহকাম সকলের জন্য অবশ্যই পালনীয়। কারো জন্য এখানে ছাড় নেই। ইসলামে যত নবী ও রাসূল এ দুনিয়াতে
এসেছেন তাঁরা সকলেই শরীয়ত পালন করেছেন এবং কিভাবে তা পালন করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়। “অতঃপর আমি তোমাকে দ্বীনের শরীয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত করে দিলাম। অতএব তুমি তা অনুসরণ কর এবং অজ্ঞ ব্যক্তিদের খেয়াল খুশি অনুসরণ করো না”। আল কুরআন ও হাদিসে শরীয়তের উপর অধিক জোর দেয়া হয়েছে। তাই একে আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপানও বলা যেতে পারে।
মারেফত : মারেফত বলতে বুঝায় আধ্যাত্মিক জ্যোতি। এ এমন এক জ্যোতি যা অজ্ঞান ও অসত্যের অন্ধকারে আলোকিত করে। একে বর্ণনার মাধ্যমে বুঝান সম্ভব নয়, বরং অনুভবেই বুঝা সম্ভব। মারেফতের জ্ঞানের মাধ্যমে একজন সুফি সাধক আধ্যাত্মিক জ্যোতি লাভ করেন। এ জ্যোতির ফলে তার কলব বা অন্তকরণ আলোকিত হয়। তিনি তখন বস্তুর নিগূঢ় তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন। সৃষ্টি রহস্যের কালোপর্দা তার কাছ হতে অপসারিত হয়। মারেফতের আলোয় আলোকিত হয়ে সুফি আল্লাহতে নিবেদিত ও উৎসর্গকৃত হয়। পবিত্র আল কুরআনে এরশাদ হয়, “আমার ধ্যান উপাসনা জীবন মরণ সমস্তই বিশ্বনিয়ন্তা, আল্লাহর জন্য উৎসর্গকৃত” (সূরা-৭, আয়তি-১৬৩)। এ পর্যায়ে সাধক পরিপূর্ণ ভাবে আল্লাহর ধ্যান চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদের অনুশীলন ক্রমস্তরে বিভক্ত। সেগুলো হলো শরীয়ত, তরিকত, মারেফত ও হকিকত। সুফি প্রথমে শরীয়ত পালন করবে। শরীয়তকে সঠিকভাবে পালনের জন্য তরিকার অনুসন্ধান করবে। এর মাধ্যমে লাভ করবে মারেফতের জ্ঞান। এ জ্ঞানের মাধ্যমে সুফি আল্লাহ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে
পারবে।