লেনদেন ভারসাম্যে প্রতিকূলতা দূরীকরণের উপায় বর্ণনা কর ।

প্রশ্নঃ লেনদেন ভারসাম্যে প্রতিকূলতা দূরীকরণের উপায় বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : বর্তমান প্রযুক্তিগত বিশ্বে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক লেনদেনের গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে । আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান পণ্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম আমদানি ও রপ্তানি করে । যখন রপ্তানি অপেক্ষা আমদানি বেশি হয় তখন লেনদেন ভারসাম্যহীন দেখা যায় । বাংলাদেশে লেনদেন ভারসাম্য দীর্ঘকাল যাবৎ একরকম প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন ।

লেনদেন ভারসান্যে প্রতিকূলতা দূরীকরণের উপায় : নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।

১ . নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় । তাই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পাবে , রপ্তানি বাড়বে এবং লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা দূর হবে ।

২. সুদের হাঙ্গো পরিমিত হ্রাস : সুদের হার হ্রাস করলে উৎপাদন ব্যয় পূর্বের তুলনায় কমে যায় । বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয় ও ফলে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনাময় সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং লেনদেন ভারসাম্য ত্বরান্বিত হবে ।

৩. উৎপাদন ব্যয় হ্রাস : আমাদের রপ্তানীকৃত পণ্যের দাম হ্রাস করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাহিদা বাড়ানো সম্ভব । এর ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে লেনদেন ভারসাম্যের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে ।

৪. ৰাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে প্রব্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি করে এবং সেই অনুপাতে রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে লেনদেন ভারসাম্য হ্রাস পাবে ।

৫. চোরাচালান প্রতিরোধ: লেনদেন ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দূরীকরণের অন্যতম উপায় হচ্ছে কঠোর হে চোরাচালান প্রতিরোধ বা দমন করা ।

৬. সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ : বিশ্বের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণ করে এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করে লেনদেন ভারসাম্যর প্রতিকূল অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব ।

৭. বিলাসজাত দূন্যের আমদানি নিষিদ্ধ : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিভিন্ন ধরনের বিলাসজাত পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে । এসব দ্রব্যের আমদানি নিষিদ্ধ আরোপের মাধ্যমে আমদানিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার অযথা অপচয় রোধ করা যাবে । ৮. ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের মানোন্নয়ন বাংলাদেশ হতে উৎপাদিত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিশ্ব বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে । এ শিল্পের কারিগরদের দক্ষ কারিগরে পরিণত করার মাধ্যমে কুটিরশিল্পের উন্নয়ন ঘটলে ভবিষ্যৎ রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং লেনদেন ভারসাম্য সৃষ্টি হবে ।

৯. রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি : উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে যদি রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় তাহলে লেনদেন বাণিজ্যের ভারসাম্য সৃষ্টি হবে ।

১০. রপ্তানি হ্রাস : বাংলাদেশে রপ্তানি শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে লেনদেন ভারসাম্যের ব্যবধানকে অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব ।

১১. শিথিল ঋণদান পদ্ধতি : শিথিল ও সহজ শর্তে ঋণদান করলে রপ্তানিকারিগণ রপ্তানিতে উৎসাহিত হবে এবং তারা অধিক উৎপাদনে মনোযোগী হবে । এর ফলে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে এবং লেনদেন ভারসাম্যের ব্যবধান হ্রাস পাবে ।

১২. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন : বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলার জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয় । যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা যায় , সেক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে । ফলে লেনদেন ভারসাম্যহীনতা দূর হবে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে , আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উপর্যুক্ত ব্যবস্থা ছাড়াও তৈরি পোশাক , শিল্পখাত , হিমায়িত খাদ্য , চিংড়ি , নিটওয়্যার , কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য , হস্তশিল্প ও পাটজাত দ্রব্য প্রভৃতি সম্ভাবনাময় খাত সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত ও পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন সাধনের দ্বারা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে । সেই সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসজাত দ্রব্যের আমদানি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে । এভাবে আমদানি ও রপ্তানির হ্রাসবৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে লেনদেন ভারসাম্য অর্জন করা সম্ভব হবে ।