লিপিবদ্ধকরণের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

অথবা, কেইস লিপিবদ্ধকরণের শর্তাবলি উল্লেখ কর।
অথবা, কেইস রেকর্ডিং-এর শর্তাবলি উল্লেখ কর।
অথবা, কেইস লিপিবদ্ধকরণ এর প্রকৃতি লিখ।
অথবা, কেইস লিপিবদ্ধকরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।
অথবা, কেইস রেকডিং এর প্রকৃতিসমূহ কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : সাহায্যার্থী সম্পর্কে কি কি বিষয় লিপিবদ্ধ করতে হয় এবং কখন ও কোন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করতে হয় তা অনেকটা ব্যক্তি ও তার সমস্যার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। তবে কিছু কিছু সাধারণ বিষয় আছে, যা অবশ্যই লিপিবদ্ধকরণ করতে হয়।
লিপিবদ্ধকরণের বৈশিষ্ট্যাবলি : লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. সহজপাঠ্য (Legible) : লিপিবদ্ধকরণের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বিষয়বস্তুর সহজ পাঠ্যতা। ব্যক্তি বিবরণী লিপিবদ্ধকরণের বিষয়বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উপাদান এবং সেসব উপাদানের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক সুস্পষ্ট ও সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে সহজে তা উপলব্ধি ও পাঠ করা যায়। অস্পষ্ট, বিচ্ছিন্ন ও বিশৃঙ্খল লিপিবদ্ধকরণের বিষয়বস্তুর পাঠোদ্ধারের অভাবে অর্থহীন হয়ে পড়ে। বিষয়বস্তু এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন সমস্যা সমাধানের অগ্রগতির স্বরূপ বা নকশা লিপিবদ্ধকরণের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
২. অর্থবহ (Meaningful) : লিপিবদ্ধকরণের তথ্যাবলি সংশ্লিষ্ট সমস্যা ও সাহায্যার্থীর সাথে সংশ্লিষ্ট ও অর্থহীন হবে।ব্যক্তি ও সমস্যার সাথে তা সংশ্লিষ্টতাহীন ও অর্থহীন হবে না। একজন সমাজকর্মী অবশ্যই অর্থপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করবেন। এতে করে পরবর্তীতে তা দেখে সমস্যার সার্বিক দিক বিচার বিশ্লেষণ করা সুবিধা হবে।
৩. প্রয়োগযোগ্যতা (Applicable) : সমাজকর্মী যেসব বিষয় তথ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ করবেন তা অবশ্যই প্রয়োগযোগ্য হতে হবে। সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় যেসব তথ্যাদির বাস্তব উপযোগিতা রয়েছে শুধুমাত্র সেগুলোই লিপিবদ্ধ করতে হবে।কার্যকর ও প্রয়োগ উপযোগী তথ্য ছাড়া লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অর্থবহ হতে পারে না। লিপিবদ্ধকৃত তথ্যের প্রয়োগযোগ্যতা কেস রেকর্ডিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
৪. সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক (Systematic and sequental) : লিপিবদ্ধকৃত তথ্যাবলি সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক হতে হবে। বিচ্ছিন্ন এবং অসম্পূর্ণ তথ্যাবলির ধারাবাহিকতা থাকে না। ব্যক্তি সমাজকর্মে লিপিবদ্ধকরণ এমন সুশৃঙ্খল হতে হবে, যাতে সমাজকর্মীর কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে লিপিবদ্ধকরণের অন্তর্ভুক্ত তথ্যাদি সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ে। ফলে যে উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করা হয় তা ব্যাহত হয়।
৫. সুনির্দিষ্ট (Specific) : উদ্দেশ্যপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট তথ্যাবলি লিপিবদ্ধকরণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য।এ কারণে লিপিবদ্ধকরণের তথ্যাবলি উদ্দেশ্যপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট হতে হবে। সঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্যাদি ছাড়া লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অর্থবহ ও কার্যকরী হতে পারে না। যেমন- একজন ব্যক্তির পারিবারিক সদস্য সম্পর্কিত তথ্য দরকার।এখানে পরিবারের সদস্য সংখ্যার ক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে সদস্যগণের মোট সংখ্যা ১০ কি ১৫ জন তা লিখতে হবে। এভাবে লেখা যাবে না যে সদস্য সংখ্যা বেশি।
৬. সুস্পষ্ট ধারণা প্রকাশে সক্ষমতা (Clearly expressing things) : সাহায্যার্থীকে সাহায্যদান প্রক্রিয়ায় মনোসামাজিক অনুধ্যানের ক্ষেত্রে অনেক জটিল বিষয় আবিষ্কার করতে হয়। এসব জটিল বিষয় এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে হয় যাতে পরবর্তী পর্যায়ে সেগুলোকে চিন্তাভাবনা করে ও মূল্যায়ন করে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। মোটকথা সেগুলো যাতে ব্যক্তি কিংবা তার সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদানে সক্ষম হয়।
৭. সংক্ষিপ্ত (Briel) : লিপিবদ্ধকরণের বিষয় অবশ্যই সবসময় সংক্ষিপ্ত হতে হবে। লিপিবদ্ধকরণের বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যাধর্মী করে লেখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং তা সারসংক্ষেপ আকারে লিখতে হবে। যতদূর সম্ভব তা সঙ্কেত আকারে লেখার চেষ্টা করতে হবে। সংক্ষিপ্তভাবে লিপিবদ্ধকরণ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
৮. অনুধাবনযোগ্যতা (Understandable) : লিপিবদ্ধকরণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অনুধাবনযোগ্যতা।লিপিবদ্ধকরণে বিষয়গুলোকে সবসময় অনুধাবনযোগ্য ও বোধগম্য হতে হবে। এগুলো যাতে সহজে বুঝা যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।লিপিবদ্ধকৃত বিষয়গুলোতে কোনো প্রকার অস্পষ্টতা ও জটিলতা থাকবে না।
৯. তথ্যভিত্তিক (Data basis) : লিপিবদ্ধকরণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হবে তথ্যভিত্তিক।উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, ব্যক্তির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত আয় সম্পর্কে জানতে হবে। এতে সে ব্যক্তির মাসিক আয় কত, তার
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের মাসিক আয় কত, কোন কোন খাত থেকে সে আয়গুলো আসে, কোন কোন খাতে কিভাবে তা ব্যয় হয়, মাস শেষে কত উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি কিভাবে সংস্থাপন করা হয় ইত্যাদি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি, ব্যক্তি সমাজকর্মে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানের।ক্ষেত্রে এবং সমস্যার কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারে তথ্য লিপিবদ্ধকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এসব তথ্যগুলোকে সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ উপযোগী ও প্রাসঙ্গিক হতে হবে। তাছাড়া লিপিবদ্ধকৃত তথ্যাবলি হবে সহজবরল অথচ সংক্ষিপ্ত।তবে তথ্যগুলো যাতে পরিষ্কার ধারণা প্রকাশে সক্ষম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।