অথবা,লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
অথবা, লাহোর প্রস্তাব কেন উত্থাপন করা হয়েছিল বলে তুমি মনে কর?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪০ সালের ২২-২৩ মার্চ মুসলিম লীগের অধিবেশনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে যে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় তা লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত। বাংলার বাঘ শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এটা উত্থাপন করেন। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় হতে এ প্রস্তাবের বীজ রোপিত হয়েছিল বলে বিশ্লেষকগণ মনে করেন।
লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি : নিচে লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. স্যার সৈয়দ আহমদের ভূমিকা : উত্তর ভারতের প্রখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ স্যার সৈয়দ আহমদ খান ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করেন। তিনি ঘোষণা করেন ভারত মূলত হিন্দু ও মুসলমান এ দুটি জাতির সমন্বয়ে গঠিত।
২. ব্রিটিশদের ভূমিকা : ব্রিটিশ সরকার তাদের শাসনকালের শুরুর দিক হতে ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতি গ্রহণ করে। ফলে হিন্দুরা সবদিকে এগিয়ে যায় যেটা মুসলমানদের মধ্যে আপেক্ষিক শোষণের ধারণাকে দৃঢ় করে তোলে। হিন্দু আধিপত্য থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মুসলমানরা লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করে।
৩. লক্ষ্ণৌ চুক্তি ও জিন্নাহর চৌদ্দ দফা : প্রথম মহাযুদ্ধের সময় হতে মুসলমানরা পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি করে আসছিল। তাদের এ দাবির প্রেক্ষাপটে ১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌ চুক্তি ও ১৯২৯ সালে জিন্নাহর চৌদ্দ দফা গৃহীত হয়। যেটা লাহোর প্রস্তাবের বীজ বপন করেছিল।
৪. ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ : হিন্দুদের চাপে পড়ে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। যেটা ব্রিটিশ শাসনের প্রতি মুসলমানদের মোহ ভঙ্গ করে। ফলে মুসলমানরা পৃথক রাষ্ট্রের স্বপ্ন
দেখতে শুরু করে।
৫. ১৯৩৭ সালের নির্বাচন : ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়লাভ করে। জয়লাভ করার পর থেকে দলটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্দেমাতরম গান গাওয়ানোর ব্যবস্থা করে এবং রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে হিন্দিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালায়। ফলে তৈরি হয় লাহোর প্রস্তাবের ক্ষেত্র।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাব একদিনের চিন্তার ফসল নয়, বরং বলা যায় পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুসলমানদের লালিত দীর্ঘদিনের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠাকল্পে এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।


