রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধরন আলোচনা কর।

অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধরন বর্ণনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকরণ আলোচনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্তরবিন্যাস সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের রয়েছে নিজস্ব গতিপ্রকৃতি বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের জনচরিত্রের সাধারণ প্রবণতা ও মনস্তাত্ত্বিক মাত্রাবোধের উপস্থিতি ঘটছে এর অব্যাহত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে । আমাদের জনগণের হাজার বছরের লালিত মূল্যবোধ, বিশ্বাস, জীবনবোধ ও মুক্তিসংগ্রাম প্রতিফলিত হচ্ছে আমাদের জনীতির ভাষায়, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। বিগত সিকি শতাব্দীর রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অনুসৃত বিধিব্যবস্থা ম্যাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দিয়েছে একান্ত নিজস্ব স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য। Trial and Error এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক লেপর্বে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকতা অর্জনের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধরন : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্র্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড এবং ভার্বা (Almond and Verba 963) রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন । যথা :
১. সংকীর্ণতামুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি: শিক্ষা ও ব্যাপক রাজনৈতিক যোগাযোগের অভাব হেতু জন্ম নেয় কীর্ণতামুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জীবন সম্পর্কে জনগোষ্ঠীর ঔদাসীন্য এ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য । উন্নয়নশীল দেশ এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির চারণভূমি।
২. নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি : নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মানে হচ্ছে একটি উন্নত ও পরিণত পরিবেশ সত্ত্বেও অনৈতিক কার্যক্রমে নাগরিকদের নিস্পৃহ দৃষ্টিভঙ্গি। কোনো কোনো অতি উন্নত দেশ জীবনের পত্রিকার কারণে আর কোনকিছুর প্রতি দৃষ্টি রাখে না। মার্কিন মুলুকে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সে দেশের গোষ্ঠীর এক অংশ তাদের প্রেসিডেন্টের নাম জানে না।
৩. অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক সংস্কৃতি : অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে উত্তম নাগরিক চেতনার ফসল। নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, তেমনি ৱ্যক্তি বা নাগরিকের ভূমিকা সমাজের পরিবর্তন সংস্কৃতিতে নাগরিকগণ ব্যক্তিগত অধিকার, কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে পুরা সচেতন থাকে। রাজনৈতিক কার্যক্রমে যেমন সংস্কারের জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে। কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি এর বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত থাকে না। সুতরাং, রাজনৈতিক সংস্কৃতি সবসময়ই মিশ্র সংস্কৃতি (Mixed culture)। অ্যালমন্ড এবং পাওয়েল এ সংস্কৃতিরও প্রকারভেদ করেছেন (Almond and Powell, 1972)। যথা :
i. সংকীর্ণতামুখী নিষ্ক্রিয় সংস্কৃতি (Parochial subject culture),
ii. নিষ্ক্রিয় অংশগ্রহণকারী সংস্কৃতি (Subject participatory culture), এবং
iii. সংকীর্ণতামুখী অংশগ্রহণকারী সংস্কৃতি (Parochial participaory culture)। এ তিন ধরনের বৈশিষ্ট্য সমন্বয়ে গঠিত হয় Civic culture.
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশের দর্পণস্বরূপ। এর মাধ্যমে কোনো দেশের প্রকৃত রূপ ফুটে ওঠে । সুতরাং রাজনৈতিক, সংস্কৃতিকে অভিজ্ঞ মহল অভিহিত করেছেন খণ্ডিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিরূপে।