রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব লেখ।

অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির তাৎপর্য আলোচনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
অথবা, রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
রাজনীতি জীবনের মতোই নিরন্তন প্রবহমান। এ প্রবহমান ধারার মাঝেই আমাদের সমাজের গতিপ্রকৃতি, স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য নিবিড়ভাবে জড়িত। জীবনের আর সব প্রত্যয়ের মতো রাজনীতির রয়েছে নিজস্ব পরিবেশ, চারণভূমি। এককথায়, রাজনীতির রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এ ভাষা কখনো সরব, কখনো নীরব, কখনো রাজপথ উচ্চকিত স্লোগানে, কখনো একান্ত নীরবে গোপনে দেয়ালে দেয়ালে। আবার কখনো গণমাধ্যম বা সংবাদপত্রে। আর এ নিয়েই গড়ে ওঠে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত হতে সাহায্য করে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব : রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণ সংস্কৃতিরই অংশবিশেষ। এটি রাজনৈতিক কার্যাবলিকে অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং রাজনীতির প্রতি মানুষের বিশেষ মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়। রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্ব বিভিন্নভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন-
১. পরিবর্তন ব্যাখ্যা : প্রতিটি সমাজ ও সংস্কৃতিই পরিবর্তনশীল। সমাজ ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন সূচিত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের জীবন ও আচরণেও পরিবর্তন আসে। মানুষ নতুনত্বের ধারায় উদ্ভাসিত হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজ ও সংস্কৃতি পরিবর্তন সংক্রান্ত যাবতীয় অধ্যয়নে অংশগ্রহণ করে। এতে পরিবর্তনের ধারা, ফলাফল, কারণ, সময়, উদ্দেশ্য প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। অতীতের ঐতিহ্য এবং কর্মপ্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে কিভাবে বর্তমান রূপ লাভ করে, অর্থাৎ অতীত থেকে বর্তমানে কি পেয়েছে সে বিষয়ে এ তথ্য প্রদান করে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সর্বদা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে না।
২. রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণ : রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে রাজনীতির কতিপয় বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকে, যেগুলো মানব আচরণ ও মনোভাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ ধরনের সম্পর্ক রাজনৈতিক
ব্যবস্থার বিশ্লেষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৩. ব্যষ্টি ও সমষ্টির মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন : রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেসব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়, সেগুলো ব্যষ্টি ও সমষ্টির মধ্যকার যোগসূত্র স্থাপনে সহায়ক। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যক্তির আচরণ ও মনোভাব, উপসংস্কৃতিসহ বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়। তাছাড়া রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। এভাবে মূল রাজনৈতিক ধারায় প্রবাহিত হয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করে সাথে সাথে সংস্কৃতিকেও সমুন্নত রাখে।
৪. জাতীয় সংহতি অর্জন : রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। জাতীয় সংহতি রক্ষার্থে জাতীয়তাবাদের চেতনার বিকাশ অপরিহার্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতি যখন মানুষের মনোভাব ও আচরণের পরিবর্তন সূচিত করে একই পতাকাতলে আবদ্ধ হয়, তখন জাতীয় সংহতি গড়ে ওঠে।
৫. উপগোষ্ঠীকে জানতে সাহায্য : সংস্কৃতি কোনো সংকীর্ণ বিষয় নয়। একই সাথে রাজনীতিও একটি বিস্তৃত বিষয়। একই রাজনীতি ও সংস্কৃতির অন্তর্গত বিভিন্ন গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীকে নিয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আলোচনা করে। উপগোষ্ঠীর সংস্কৃতি আলোচনা করতে গিয়ে রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ও উপগোষ্ঠীর মধ্যকার পার্থক্য নিরূপণ করতে বিভিন্ন পারে। এভাবে গোষ্ঠীর তুলনায় উপগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রত্যশা সম্প র্কে জানা সহজ হয়।
৬. জাতি গঠন ও জাতীয় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা : আধুনিক বিশ্বে কিছু কিছু রাষ্ট্র ভেঙে একাধিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আবার কিছু কিছু রাষ্ট্রের অখণ্ডতা বিপন্ন হয়েছে। জাতি গঠন ও জাতীয় রাষ্ট্রের পারলে রাষ্ট্রের অখণ্ডতা
বিপন্ন হতে পারে। গঠন ও জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি রাজনৈতিক সম্পন্ন করে থাকে।সংস্কৃতিগঠনের বিষয়টি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশি প্রয়োগ করা যায়। উন্নয়নশীল দেশে একই জাতি ও জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় ।
৭. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : একটি দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সর্বতোভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে তোলে। সরকার, রাজনীতি, রাজনৈতিক দলের কার্যপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা অপরিহার্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে সহায়তা করে।
৮. রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ : রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের সাথে রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। ব্যক্তিকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তার পারিপার্শ্বিকতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সামাজিকীকরণের বিশেষ পর্যায়ে মানুষ সংস্কৃতির সাথে পরিচয় লাভ করে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যক্তিকে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে সহায়তা করে।
৯. ভবিষ্যদ্বাণী : কোনো তত্ত্ব বা প্রক্রিয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা একটি বিশেষ গুণ বলে বিবেচিত হয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ব্যক্তির সাথে রাজনীতির সম্পর্ক বজায় রেখে রাজনীতির বর্তমান ও অতীত বিশ্লেষণ করে এবং বর্তমান ও অতীত অবস্থার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতকে বিশ্লেষণ করতে পারে। এভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে।
১০. রাজনৈতিক কাঠামোর ব্যাখ্যা : ভারবা মনে করেন, “রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও কাঠামোর মধ্যে সম্পর্কের চক্র বিদ্যমান।” একটি সমাজের রাজনৈতিক কাঠামো জনগণের মনোভাব ও আচরণের অনুশীলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। জনগণের মনোভাব ও আচরণ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠে। সামাজিকীকরণের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যক্তিবিশেষ বিশেষ সংস্কৃতির সাথে পরিচিতি লাভ করে। এ সংস্কৃতিই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি সাধারণ সংস্কৃতিরই অংশবিশেষ। এটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং রাজনীতির মানুষের ইতিবাচক মানষিকতার প্রতিফলন ঘটায়। এছাড়া রাজনৈতিক সংস্কৃতিক দেশের জনগণের মধ্যে বিশেষ মনোভাব সৃষ্টি করে।
কত বর্ণনা কর।