উত্তর : শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ের মধ্যে যৌবনকালই হচ্ছে মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যৌবনে প্রবেশ করে মানুষ খুঁজে পায় জীবনের চরম সার্থকতা। এ সময়েই মানুষের বাহ্যেন্দ্রিয়, কর্মেন্দ্রিয় ও অন্তরেন্দ্রিয় সবচেয়ে বেশি সজাগ ও সচল থাকে। প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরী মানবজীবনের এ শ্রেষ্ঠ সম্পদ যৌবনের কপালে রাজটিকা পরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন এ প্রবন্ধে। কারণ যৌবন তার অন্তরে বহন করে অপরিমেয় শক্তি। কিন্তু এ শক্তিকে ভয় পায় সনাতনপন্থিরা। তারা যৌবনের বেগ ও আবেগ কোনটাই সহ্য করতে রাজি নয়। যৌবনের প্রশস্তি রচনায় তাদের ঘোর আপত্তি। এরা মানুষের কৈশোর থেকে বার্ধক্যে পৌঁছানোটাকেই পছন্দ করে। প্রাবন্ধিক এদের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তিনি এদের বক্তব্যের সাথে একমত নন। শরীর ও মন পরস্পরের সম্পূরক। সংস্কৃত কবিরা শরীরকে প্রাধান্য দিয়ে দেহ ও মনের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল ব্যবধান। এঁরা যৌবনকে কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবে দেখেছিলেন। যৌবন অনিত্য বলে যৌবনের উপর এঁদের ছিল এত বিরাগ। তাই তাঁরা যৌবন নিন্দায় মেতে উঠেছিলেন। কিন্তু বাহ্যিক চিন্তায় জীবন ও যৌবন অনিত্য হলেও সমাজের হিসেবে তা নয়। সুতরাং সমাজের কথা ভেবে যৌবনের ললাটে রাজটিকা পরানো একান্ত প্রয়োজন। কারণ যৌবনই পারে সমাজকে জাগিয়ে তুলতে ! যদিও দেহ ও মনের সম্বন্ধ অবিচ্ছিন্ন তথাপি দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন এক নয়। দেহের যৌবনের চেয়ে মনের যৌবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনের যৌবন লাভ করতে পারলে সমাজ দেহে তা প্রতিষ্ঠা করা সহজ। দেহের যৌবন এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তর বা সঞ্চালন করা সম্ভব নয়। কিন্তু মনের যৌবন এক মন থেকে লক্ষ কোটি মনে সঞ্চালন করা সম্ভব। এ মনের যৌবন লাভের জন্য প্রথম প্রয়োজন প্রাণের প্রবাহপথকে উন্মুক্ত করা। কারণ একমাত্র প্রাণশক্তিই পারে জড় ও চৈতন্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে। যে সমাজে বহু ব্যক্তির মানসিক যৌবন আছে একমাত্র সে সমাজেরই যৌবন আছে। মানসিক যৌবনকে স্থায়ী করতে হলে আমাদের সকলকে যৌবনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। তবেই সমাজে নতুন প্রাণ, নতুন মন, নতুন চিন্তা ও নতুন কর্মস্রোত জন্মাবে। অন্যথায় সমাজ গতিহীন হয়ে পড়বে।