অথবা, যুদ্ধাপরাধ বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে মানবতাবিরোধী একটি জঘন্যতম অপরাধ। যুদ্ধক্ষেত্রে নিরীহ নিরস্ত্র জনতাকে কোনো বাহিনী কর্তৃক সুপরিকল্পিভাবে হত্যা, নির্যাতন করলে যুদ্ধাপরাধের ঘটনা ঘটে। যুদ্ধকালীন সময়ে মানবতাবিরোধী যেকোন অপকর্মকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে পরিগণিত করা হয়।
যুদ্ধাপরাধ : কোনো দেশ, জাতি বা সামরিক বেসামরিক ব্যক্তি কর্তৃক যুদ্ধের রীতিনীতি বা আন্তর্জাতিক আইন জেনেভা কনভেনশন নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রতিপক্ষ শক্তিকে আঘাত করলে যুদ্ধাপরাধ বলে পরিগণিত হয়। নিচে যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ব্ল্যাক অফ কমিউনিজম; ক্রাইম টেরর রিপ্রেশন’ গ্রন্থে যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা অনুযায়ী “যুদ্ধের আইন বা প্রথা লঙ্ঘন করে হত্যা, নির্যাতন যা সাধারণ নাগরিকদের নির্বাসিত করে অধিকৃত জনপদে ক্রীতদাস শ্রম ক্যাম্পে পরিণত করা, আটককৃতদের হত্যা ও নির্যাতন, অপহৃতদের হত্যা, সামরিক বা বেসামরিক প্রয়োজন ছাড়াই দায়িত্বজ্ঞানহীন নগর, শহর ও গ্রামাঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করাকে যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়।” চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ১৪৭ ধারায় যুদ্ধাপরাধ প্রসঙ্গে বলা হয় : “ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা, নির্যাতন বা অমানবিক ব্যবহার এবং শরীর বা স্বাস্থ্যের অঙ্গহানি, গুরুতর আঘাত করা বা তার দুর্দশার কারণ তৈরি, অন্যায়ভাবে কাউকে বিতাড়িত, কাউকে জিম্মি করা, বিপুল পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ও সম্পত্তি আত্মসাৎ করা, সামরিক প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বেআইনি ও নীতির বিরুদ্ধে উপরের যে কোনো এক বা একাধিক কর্মকাণ্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।” মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধবন্দি সৈনিকদের সাথে জেনেভা কনভেনশন বিরোধী আচরণ যুদ্ধাপরাধ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যুদ্ধাপরাধ একটি গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ। যুদ্ধক্ষেত্রে গণহত্যা, নিরীহ বেসামরিক লোকদের হত্যা, নির্যাতন, যুদ্ধাবন্দী সৈন্য বা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের সাথে অমর্যাদাকর ব্যবহার যুদ্ধাপরাধের শামিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, দেশীয় আল-বদর, আল-শামস্, রাজাকার বাহিনীগুলো যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল।