উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালাম বিরচিত ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : উক্তিটি হাজেরার। গহুরালির বউ হাজেরা গ্রামের পুরুষদের ব্যবসাপাতি সম্পর্কে কটাক্ষ করে এ উক্তি করেছে।
বিশ্লেষণ : বাংলাদেশের গ্রামগুলো চিরকালই ছিল নিস্তরঙ্গ। নগরকেন্দ্রিক শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত গ্রাম্যজীবন ছিল বিচ্ছিন্ন। ইংরেজ শাসনের শেষদিকে গ্রামের সাথে ধীরে ধীরে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে মাউলতলা এমনি একটি গ্রাম। এই গ্রামের জনৈক জোনাবালির উদ্যোগে একটি রাস্তা নির্মিত হয়। রাস্তাটি দরিদ্র কৃষক গহুরালির পাঁচ কুড়া জমির দুই কুড়াই গ্রাস করে। নতুন জীবনের আশায় গ্রামের মানুষ শহরের সাথে পরিচিত হতে শুরু করে। গহুরালিও একবার শহর থেকে ঘুরে এসে পয়সা উপার্জনে মনোনিবেশ করে। শুধু সে একা নয়, আরও পাঁচজন মিলে তরিতরকারী, শাকসবজি, মাছ যে যা জোটাতে পারে তা নিয়েই ঐ রাস্তা দিয়ে শহরে যাওয়া আসা শুরু করল। এমন যে থানকুনি পাতা যা গ্রামের বনে বাদাড়ে অজস্র জন্মায়-কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না, শহরে তাতেও পয়সা। এমনি করে ধীরে ধীরে গ্রামের উৎপাদিত প্রতিটি বস্তু শহরের পথে চালান হতে লাগল। আর এসব জিনিস বিক্রি করে গহুরালিরা কাঁচা পয়সা উপার্জন শুরু করল। গহুরালির সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এল। বছর তিনেকের মধ্যে সে ঘরের চালের খড় ফেলে দিয়ে টিন তুলে ফেলল। হাজেরা পুরুষদের এসব জিনিসপত্র শহরে নিয়ে বিক্রি করা প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে স্বামীকে বলল, “যা আরম্ভ করলা, শেষকালে আমাগোওনা বাজারে লইয়া যাও।” হাজেরা স্বামীকে এ কথাটা বলেছিল রহস্যচ্ছলে।
মন্তব্য: রহস্যচ্ছলে বলা কথাটাই শেষপর্যন্ত গহুরালির জীবনে সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হাজেরা সত্যিই একদিন পরপুরুষের হাত ধরে গ্রাম থেকে চলে গেল ।