যখন সভ্য জগতের মহিমাধ্যানে একান্ত মনে নির্বিষ্ট ছিলেন তখন কোনদিন সভ্য নামধারী মানব আদর্শের এতবড় নিষ্ঠুর বিকৃতরূপ কল্পনা করতেই পারিনি।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : পাশ্চাত্য সভ্যতার উৎকর্ষতায় মোহাচ্ছন্ন রবীন্দ্রনাথ এখানে নিজের ভ্রান্ত ধারণাকে স্বীকার করে নিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : ইংরেজরা ভারতবর্ষে এসেছিল বাণিজ্য করতে। ব্যবসায়-বাণিজ্যের উর্বর ক্ষেত্র পেয়ে তারা জেঁকে বসেছিল ভারতের মাটিতে। স্বীয় বুদ্ধি, কৌশল ও ক্ষমতার জোরে একদিন তারা ভারতবর্ষের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে বসল। এরপর প্রায় দুইশত বছর তারা শাসন করেছে ভারতীয়দের। ভারতের জনসাধারণ একসময় ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ বলে মনে করেছিল। এদশ তন নাগরিকেরা ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে অন্তর থেকে গ্রহণ করেছিল। পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্তরের সম্পদ মানবমৈত্রীর পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিল তারা। তখন ইংরেজি ভাষার ভিতর দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা ও উপভোগ করা ছিল মার্জিতমনা বৈদগ্ধ্যের পরিচয়। ইংরেজদের প্রতি ভারতীয়দের বিশ্বাস এত গভীর ছিল যে এক সময় এদেশের স্বাধীনতার সাধকেরা ভেবেছিলেন তারা তাদের দাক্ষিণ্যের দ্বারাই ভারতের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করবে। সে সময় এ অত্যাচার প্রপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল ছিল ইংল্যান্ড। রবীন্দ্রনাথও তাই ইংরেজকে আন্তরিক শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেন। সে সময় তিনি সভ্য জগতের মহিমাধ্যানে একান্তমনে এমন নিবিষ্ট ছিলেন যে, সভ্য নামধারী মানব আদর্শের অন্তরালেও সে কদর্যতা থাকতে পারে তা ভাবতে পারেননি। এক সময় চোখের সামনে যখন ইংরেজদের সাম্রাজ্য মদমত্ততা প্রত্যক্ষ করলেন তখন সে কদর্য চেহারা দেখে তিনি শিউরে উঠলেন। এর আগে মানব আদর্শের এতবড় নিষ্ঠুর বিকৃতরূপ ছিল তার কল্পনার অতীত। তার প্রকৃত চেহারা দেখে রবীন্দ্রনাথের মোহভঙ্গ ঘটল ।
মন্তব্য : বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় মুহ্যমান রবীন্দ্রনাথ ইংরেজদের প্রতি বিরূপ হয়ে এ যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। এ মূল্যায়ন তাঁর আন্তরিক স্বীকারোক্তি।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%ad%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%95%e0%a6%9f-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8%e0%a7%8d/