ম্যাকক্লিল্যান্ডের অর্জিত চাহিদা তত্ত্বটি বর্ণনা কর।

ম্যাকক্লিল্যান্ডের অর্জিত চাহিদা তত্ত্বটি ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ডুগলাস ম্যাকক্লিল্যান্ড দ্বারা প্রস্তাবিত একটি প্রেষণার তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুসারে, মানুষের প্রেষণা তিনটি অর্জিত চাহিদার দ্বারা নির্ধারিত হয়: সাফল্য, ক্ষমতা এবং সম্পর্ক।

সাফল্য চাহিদা হলো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজের মাধ্যমে উচ্চ মানের ফলাফল অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। এই চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা ঝুঁকি নিতে এবং চ্যালেঞ্জিং কাজের সন্ধান করতে আগ্রহী। তারা প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়া এবং তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়ার মাধ্যমে পুরস্কৃত বোধ করে।

ক্ষমতা চাহিদা হলো অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করার এবং তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার আকাঙ্ক্ষা। এই চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব এবং প্রভাব অর্জন করতে আগ্রহী। তারা অন্যদেরকে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার মাধ্যমে পুরস্কৃত বোধ করে।

সম্পর্ক চাহিদা হলো অন্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা। এই চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন, তাদের সাহায্য করা এবং তাদের কাছ থেকে গ্রহণ করা দ্বারা পুরস্কৃত বোধ করে।

ম্যাকক্লিল্যান্ডের মতে, এই তিনটি চাহিদা জন্মগত নয়, বরং পরিবেশগত কারণ এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা অর্জন করা হয়। এই চাহিদাগুলি ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তির সাফল্য চাহিদা অন্য ব্যক্তির চেয়ে বেশি হতে পারে।

ম্যাকক্লিল্যান্ডের অর্জিত চাহিদা তত্ত্বটি কর্মক্ষেত্রে প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। এই তত্ত্বটি ব্যবহার করে, ব্যবস্থাপকরা তাদের কর্মীদের প্রেষণার মাত্রা নির্ধারণ করতে এবং তাদের কাজের প্রকৃতি এবং কর্মসম্পাদনের মূল্যায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

ম্যাকক্লিল্যান্ডের তত্ত্বের কিছু সমালোচনা রয়েছে। কিছু সমালোচক যুক্তি দেন যে এই তত্ত্বটি খুব সাধারণ এবং ব্যক্তির মধ্যে চাহিদার বিভিন্ন মাত্রা বিবেচনা করে না। অন্যরা যুক্তি দেন যে এই তত্ত্বটি পরিবেশগত এবং সামাজিক কারণগুলির প্রভাবকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না।

তত্ত্বটির প্রয়োগ

ম্যাকক্লিল্যান্ডের অর্জিত চাহিদা তত্ত্বটি কর্মক্ষেত্রে প্রেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। এই তত্ত্বটি ব্যবহার করে, ব্যবস্থাপকরা তাদের কর্মীদের প্রেষণার মাত্রা নির্ধারণ করতে এবং তাদের কাজের প্রকৃতি এবং কর্মসম্পাদনের মূল্যায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যবস্থাপক যদি জানেন যে তার একজন কর্মীর সাফল্য চাহিদা বেশি, তাহলে সে সেই কর্মীকে চ্যালেঞ্জিং কাজ এবং উচ্চ মাত্রার স্বাধীনতা প্রদান করতে পারে। এটি কর্মীকে তার সাফল্য অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে এবং তার কাজে সন্তুষ্ট থাকতে সহায়তা করবে।

অন্যদিকে, একজন ব্যবস্থাপক যদি জানেন যে তার একজন কর্মীর ক্ষমতা চাহিদা বেশি, তাহলে সে সেই কর্মীকে নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব অর্জনের সুযোগ প্রদান করতে পারে। এটি কর্মীকে তার প্রভাব বিস্তার করার এবং অন্যদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে সহায়তা করবে।

একইভাবে, একজন ব্যবস্থাপক যদি জানেন যে তার একজন কর্মীর সম্পর্ক চাহিদা বেশি, তাহলে সে সেই কর্মীকে অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং তাদের সাহায্য করার সুযোগ প্রদান করতে পারে। এটি কর্মীকে তার ঘনিষ্ঠ এবং অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে সহায়তা করবে।

ম্যাকক্লিল্যান্ডের অর্জিত চাহিদা তত্ত্বটি একটি শক্তিশালী প্রেষণার তত্ত্ব যা ব্যবস্থাপকদের তাদের কর্মীদের প্রেষণা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।