মূল্যায়ন কী? মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো কী?

অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে মূল্যায়ন কী? মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে মনোযোগ দেয়া হয়?
অথবা, মূল্যায়নের প্রকারভেদ লিখ। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো কী?
অথবা, মূল্যায়নের প্রকারভেদ ও বিবেচ্য বিষয়গুলো আলোচনা কর।
অথবা, মূল্যায়ন কাকে বলে? এর শ্রেণিবিভাগ ও আলোচ্য বিষয়গুলো উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মূল্যায়ন বলতে সাধারণত কোন বিষয়ের উপর সম্পাদিত কাজের দুর্বল ও সব দিকসমূহ নির্ণয় ও পরিমাপ করার কর্মপ্রক্রিয়াকে বুঝায়। তাই বলা হয়, Evaluation, in social case work, is an attempt to assess the strengths and weaknesses of the problems solving process.
মূল্যায়ন (Evaluation)/ মূল্যায়নের প্রকারভেদ : সাহায্যার্থীকে প্রকৃত সাহায্যের লক্ষ্যে ব্যক্তি সমাজকর্মের সমাধান প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে গৃহীত ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ এবং সার্থক দিকগুলো চিহ্নিত করার আবশ্যকতা অপরিসীম। ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ায় সমস্যার স্বরূপ নির্ণয়ের ন্যায় মূল্যায়ন কার্যক্রমও অবিরাম গতিতে ক্রিয়াশীল থাকে। অর্থাৎ সমাজকর্ম প্রক্রিয়া চালু হওয়ার সময় থেকে শেষ অবধি মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে কার্যকর থাকে।
আপাতদৃষ্টিতে মূল্যায়ন কার্য সমাপ্তির পর সম্পন্ন হয় বলে মনে করা হলেও ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার অন্যান্য স্তরের ন্যায়ও এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই এক্ষেত্রে Gordon Hamilton বলেছেন, এটি প্রথম
সাক্ষাৎকারেই শুরু হয় যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, কোর্সটি আমাদের এজেন্সির জন্য উপযোগী কি না, আমরাই প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য সর্বোত্তম কি না, এটি পুনরায় দেখা দেয় যখন আমরা ক্লায়েন্টের সমস্যার উপর তার সচেতনতা, নির্ভরযোগ্যতা, তার বাস্তব সম্পদ এবং তার বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন করি। মূল্যায়ন সাধারণত দু’প্রকার। যথা :
ক. ক্রমাগত মূল্যায়ন : সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এরূপ মূল্যায়ন চলতে থাকে।তাতে দেখা যায় সাহায্যার্থীর জন্য কোন ধরনের সমাধান কৌশল অধিকতর কার্যকরী হচ্ছে, কার্যকর না হলে কেন কার্যকর হচ্ছে না এবং সমাধানমূলক ব্যবস্থাকে আরো কিভাবে অধিকতর কার্যকর করা যায়।
খ. মেয়াদি মূল্যায়ন : এতে সেবাদানের নির্দিষ্ট মেয়াদ মূল্যায়ন করা হয়। এরূপ মূল্যায়নকে চূড়ান্ত মূল্যায়নও বলা হয়। তাতে উদ্দেশ্য অর্জনে সফলতা-বিফলতা কিংবা সেবাদানমূলক ব্যবস্থার সবল-দুর্বল দিক বিচারবিশ্লেষণ করা হয়।মূল্যায়ন একটি সুচিন্তিত গবেষণাধর্মী কাজ।
ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করে কার্যকর ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের উপর। মূল্যায়ন হলো তথ্যভিত্তিক উপসংহার অর্থাৎ Evaluation is the conclusion or conclusion reached based in the facts. এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বা তা অব্যাহত গতিতে চলে। এ প্রক্রিয়া পরিকল্পনার মূল রূপরেখায় বাঞ্ছিত পরিবর্তন, সংশোধন,সংযোজন বা অবলোপ করার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। তবে মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়ের সমন্বিত অংশগ্রহণ আবশ্যক।
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় : মূল্যায়নের বিবেচ্য বিষয় হিসেবে নিম্নোক্ত দিকসমূহে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া দরকার :
১. মূল্যায়ন প্রয়োজনীয়তা নির্ণয়করণ : মূল্যায়ন কার্যক্রম গ্রহণের আগে মূল্যায়নকারীকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে,তিনি যে বিষয়ে যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে মূল্যায়ন করতে চান তা তার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন কি না। অর্থাৎ
মূল্যায়নের আবশ্যকতা বিবেচনার মধ্য দিয়েই তাকে মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত হতে হবে। কেননা প্রয়োজন নেই এমন বিষয়ে মূল্যায়ন ভবিষ্যৎ কর্মে সহায়ক হয় না।
২. মূল্যায়নকারীর গ্রহণযোগ্যতা : মূল্যায়নকারী সমাজকর্মী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। তার জ্ঞান, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সমাজকর্মী ও প্রতিষ্ঠান আস্থাশীল না হতে পারলে সুষ্ঠু মূল্যায়নের প্রত্যাশা আসে না।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য : মূল্যায়নে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় জনবল, অর্থ ও অন্যান্য সমর্থন তথা ব্যবস্থাপনাগত সামর্থ্য আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হয়। কেননা এরূপ সম্পদগত কমতি ও ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা সুষ্ঠু মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনে অন্তরায় হতে পারে।
৪. সাহায্যার্থীর মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত দিকসমূহ বিবেচনাধীন রাখা : মূল্যায়ন সাহায্যার্থীর মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত দিকসমূহ যেমন- তার কর্মশক্তি, আত্মবিশ্বাস, চরিত্র, বিবেকবোধসহ বিভিন্ন আচরণগত দিক বিবেচনাধীনে আনতে হয়। কেননা এগুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমেই সাহায্যার্থীর পরিবর্তনযোগ্য করা হয়।
৫. সাহায্যার্থীর সেবাপ্রাপ্তির পূর্বেকার অবস্থা : সেবাপ্রাপ্তির পূর্বে সাহায্যার্থীর সমস্যার প্রকৃতি, প্রত্যাশা ও উত্তরণ প্রচেষ্টা কি ধরনের ছিল। অর্থাৎ কিরূপ অবস্থায় কিভাবে সে সমস্যার মোকাবিলা করত।
৬. সেবাপ্রাপ্তির পর সাহায্যার্থীর পরিবর্তন : সাহায্য সেবা পাওয়ার পর সাহায্যার্থীর কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা বা কি রকম পরিবর্তন এসেছে, তার মধ্যে অহেতুক ক্রোধ, উদ্বেগ, অন্যায়ের সাথে সংগতিবিধানে অনাগ্রহ, অপারগতা, অহেতুক মানসিক চাপ ও আবেগিক জড়তা আছে কি না।
৭. সমাজকর্মীর সেবা কার্যকারিতা নিরূপণ : সমাজকর্মীর কার্যপদ্ধতি ও ভূমিকার কার্যকারিতা তথা সফলতা বিফলতার দিকসমূহ দেখা। এতে কোন ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন এবং কোন ক্ষেত্রে বিফল হয়েছেন এসব দেখতে হবে।
একই সাথে তার অনুসরণীয় কলাকৌশলসমূহ কতটা বাস্তব উপযোগী ও ফলদায়ক সেসব বিষয়ও দেখতে হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করে কার্যকর ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের উপর। মূল্যায়ন হলো তথ্যভিত্তিক উপসংহার অর্থাৎ Evaluation is the conclusion or conclusion reached based in the facts. এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বা তা অব্যাহত গতিতে চলে। এ প্রক্রিয়া পরিকল্পনার মূল রূপরেখায় বাঞ্ছিত পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন বা অবলোপ করার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে।তবে মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়ের সমন্বিত অংশগ্রহণ আবশ্যক।