মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো কী?

অথবা, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে মনোযোগ দেয়া হয়?
অথবা, মূল্যায়নের বিবেচ্য বিষয়গুলো তুলেধর।
অথবা, মূল্যায়নের সময় শেষ কোন বিষয়য়ের প্রতিমনোযোগ দেওয়া উচিত?
অথবা, একজন মূল্যায়নকারী মূল্যায়নের সময় কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখবেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : মূল্যায়ন বলতে সাধারণত কোনো বিষয়ের উপর সম্পাদিত কাজের দুর্বল ও সব দিকসমূহ নির্ণয় ও পরিমাপ করার কর্মপ্রক্রিয়াকে বুঝায়। তাই বলা হয়, Evaluation, in social case work, is an attempt to assess the strengths and weaknesses of the problems solving process.
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় : মূল্যায়নের বিবেচ্য বিষয় হিসেবে নিম্নোক্ত দিকসমূহে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া দরকার :
১. মূল্যায়ন প্রয়োজনীয়তা নির্ণয়করণ : মূল্যায়ন কার্যক্রম গ্রহণের আগে মূল্যায়নকারীকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে,তিনি যে বিষয়ে যে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে মূল্যায়ন করতে চান তা তার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন কি না। অর্থাৎ
মূল্যায়নের আবশ্যকতা বিবেচনার মধ্য দিয়েই তাকে মূল্যায়নের কাজে নিয়োজিত হতে হবে। কেননা প্রয়োজন নেই এমন বিষয়ে মূল্যায়ন ভবিষ্যৎ কর্মে সহায়ক হয় না।
২. মূল্যায়নকারীর গ্রহণযোগ্যতা : মূল্যায়নকারী সমাজকর্মী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। তার জ্ঞান, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে সমাজকর্মী ও প্রতিষ্ঠান আস্থাশীল না
হতে পারলে সুষ্ঠু মূল্যায়নের প্রত্যাশা আসে না।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য : মূল্যায়নে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় জনবল, অর্থ ও অন্যান্য সমর্থন তথা ব্যবস্থাপনাগত সামর্থ্য আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হয়। কেননা এরূপ সম্পদগত কমতি ও ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা সুষ্ঠু মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনে অন্তরায় হতে পারে।
৪. সাহায্যার্থীর মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত দিকসমূহ বিবেচনাধীন রাখা : মূল্যায়ন সাহায্যার্থীর মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত দিকসমূহ যেমন- তার কর্মশক্তি, আত্মবিশ্বাস, চরিত্র, বিবেকবোধসহ বিভিন্ন আচরণগত দিক বিবেচনাধীনে আনতে হয়। কেননা এগুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমেই সাহায্যার্থীর পরিবর্তনযোগ্য করা হয়।
৫. সাহায্যার্থীর সেবাপ্রাপ্তির পূর্বেকার অবস্থা : সেবাপ্রাপ্তির পূর্বে সাহায্যার্থীর সমস্যার প্রকৃতি, প্রত্যাশা ও উত্তরণ প্রচেষ্টা কি ধরনের ছিল। অর্থাৎ কিরূপ অবস্থায় কিভাবে সে সমস্যার মোকাবিলা করতো।
৬. সেবাপ্রাপ্তির পর সাহায্যার্থীর পরিবর্তন : সাহায্য সেবা পাওয়ার পর সাহায্যার্থীর কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা বা কি রকম পরিবর্তন এসেছে, তার মধ্যে অহেতুক ক্রোধ, উদ্বেগ, অন্যায়ের সাথে সংগতিবিধানে অনাগ্রহ অপারগতা, অহেতুক মানসিক চাপ ও আবেগিক জড়তা আছে কি না।
৭. সমাজকর্মীর সেবা কার্যকারিতা নিরূপণ : সমাজকর্মীর কার্যপদ্ধতি ও ভূমিকার কার্যকারিতা তথা সফলতা বিফলতার দিকসমূহ দেখা। এতে কোনো ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছেন এবং কোন ক্ষেত্রে বিফল হয়েছেন এসব দেখতে হবে।একই সাথে তার অনুসরণীয় কলাকৌশলসমূহ কতটা বাস্তব উপযোগী ও ফলদায়ক সেসব বিষয়ও দেখতে হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার সাফল্য নির্ভর করে কার্যকর ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের উপর। মূল্যায়ন হলো তথ্যভিত্তিক উপসংহার অর্থাৎ Evaluation is the conclusion or conclusion reached based in the facts. এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ বা তা অব্যাহত গতিতে চলে। এ প্রক্রিয়া পরিকল্পনার মূল রূপরেখায় বাঞ্ছিত পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন বা অবলোপন করার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। তবে মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী উভয়ের সমন্বিত অংশগ্রহণ আবশ্যক।