অথবা, মানবতাবাদ কী?
অথবা, মানবতাবাদ সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, মানবতাবাদ বলতে কী বুঝায়?
উত্তর।৷ ভূমিকা : যে মতবাদ মানব কল্যাণের কথা বলে তাই মানবতাবাদ হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ কি করে বা কোন উপায়ে মানবের সঠিক কল্যাণ সাধিত হবে, তা নিয়ে দর্শনের যে শাখা আলোচনা করে, তাকে মানবতাবাদ বলে। দর্শনের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা বিভিন্ন মানবতাবাদী চিন্তাধারার পরিচয় পাই।
মানবতাবাদ : মানবতাবাদের বিভিন্ন দিক বা শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যথা: ১. ব্যক্তি মানবতাবাদ, ২. সামাজিক মানবতাবাদ, ৩. রাষ্ট্রীয় মানবতাবাদ, ৪. ধর্মীয় মানবতাবাদ ও ৫. বিশ্বমানবতাবাদ।
১. ব্যক্তি মানবতাবাদ : মানুষের নিজস্ব স্বতন্ত্র সত্তা থেকে এক ধরনের মানবতাবাদের সৃষ্টি হতে পারে, আর এটাই ব্যক্তি মানবতাবাদ । অর্থাৎ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষ মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা প্রদর্শন করে তাই ব্যক্তি মানবতাবাদ।
২. সামাজিক মানবতাবাদ : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই মানুষকে সামাজিক শান্তি, ঐক্য, সংহতি এবং ধনী দরিদ্র, উঁচুনীচু নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবশ্যই সহনশীল হতে হয়। এটাই হলো সামাজিক মানবতাবাদ।
৩. রাষ্ট্রীয় মানবতাবাদ : মানুষ সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর পর্যালোচনা করে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি মতৈক্যে আসতে চেষ্টা করে, তখন মানুষ উপলব্ধি করে এক বড় জনসমষ্টির। আর তার এ উপলব্ধির সাথে সকল জনগোষ্ঠীর উপলব্ধির বিনিময় হয়। আর এভাবেই সমাধান হয় বিভিন্ন কর্মের। এটিই রাষ্ট্রীয় মানবতাবাদ।
৪. ধর্মীয় মানবতাবাদ : পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই কমবেশি ধর্মে বিশ্বাসী, আর তা যে কোনো ধর্ম হতে পারে। তবে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার না হয়ে যদি কোনো দেশে গণতান্ত্রিক সরকার হয়, তবে তখন ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব থাকে। আর এ ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাবই হলো ধর্মীয় মানবতাবাদ।
৫. বিশ্বমানবতাবাদ : বিশ্বের প্রতিটি দেশে যদি এ মানবতা বিরাজ করে এবং কোনো দেশ যদি অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ না করে এবং একে অপরের দিকে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তখনই সৃষ্টি হয় বিশ্বভ্রাতৃত্ব। আর এ মানসিকতাই হলো বিশ্বমানবতাবাদ। ড. জি. সি. দেব এ ধরনের মানবতাবাদে বিশ্বাস করতেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ছিল বিশ্ব মানবের বন্ধু। মানবতার জয়গান তাঁর কবিতা, উপন্যাস ও গানের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। মৃত্যুর মাত্র সাতদিন আগে তিনি লিখেন,
“তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ
আকীর্ণ করি,
বিচিত্র ছলনাজালে
হে ছলনাময়ী।”