অথবা, মানবজীবনের অত্যাবশ্যকীয় চাহিদাসমূহ বিস্তারিত আলোচনা কর ।
অথবা, মানবজীবনের প্রয়োজনীয় দৈহিক ও মানসিক চাহিদা কী কী?
অথবা, মানুষের মৌল মানবিক চাহিদাসমূহ কী কী?
অথবা, তোমার মতে শিশুর দৈহিক ও মানসিক চাহিদাগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষের মধ্যে তার কতকগুলো দিক বিদ্যমান। যেমন- তার দৈহিক, মানসিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি। এসব পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের চাহিদাও বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। নিম্নে প্রশ্নানুসারে মানবজীবনে অপরিহার্য দৈহিক ও মানসিক চাহিদা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হল।
মানবজীবনের অপরিহার্য দৈহিক ও মানসিক চাহিদা :
দৈহিক বা শারীরিক চাহিদা : মানবজীবনের চাহিদাগুলো পরস্পর নির্ভরশীল। তারপরেও কিছু বিশেষ চাহিদা তার বিশেষ প্রয়োজন পূরণে সহায়ক। দৈহিক চাহিদা মূলত মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের লক্ষ্যে উদ্ভূত। উল্লেখযোগ্য দৈহিক চাহিদাসমূহ হল :
১. খাদ্য বা সুষম খাদ্য : মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হল খাদ্য। খাদ্য বলতে ঐসব উপাদানসমূহকে বুঝায় যা আমরা ক্ষুধা নিবৃত্ত করণের জন্য গ্রহণ করি এবং খাদ্য শুধু আমাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করে না, আমাদের শারীরিক শক্তি যোগায়। বর্তমানে খাদ্য বলতে সুষম খাদ্যকেই বুঝানো হয়। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ করা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কারণ মানুষ যদি যথাযথ খাদ্য না পায় তবে সে পুষ্টিহীনতার শিকার হয়। তার বুদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয় ফলাফলস্বরূপ সে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
২. স্বাস্থ্য বা স্বাস্থ্যসেবা : স্বাস্থ্য মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। মোটা শরীর মানেই স্বাস্থ্য নয়। স্বাস্থ্য বলতে বুঝায় রোগমুক্ত শরীর। তাই রোগমুক্ত শরীর প্রত্যেকটি মানুষেরই কাম্য। কারণ অসুস্থ ব্যক্তির পক্ষে কোন ধরনের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব নয়। সে পরিবার তথা সমাজজীবনে একটি বোঝা হিসেবে গণ্য হয়।
৩. আশ্রয় : আশ্রয় বলতে সাধারণত বাসস্থানকে বুঝায়। মোঃ আতিকুর রহমান তার ‘স্নাতক সমাজকল্যাণ’ নামক গ্রন্থে আশ্রয়কে অন্যতম শারীরিক চাহিদা বলে অভিহিত করেছেন। আশ্রয়স্থল মানুষকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ হতে সুরক্ষা দেয়। যেমন- ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা, সূর্যের তাপ, বিষাক্ত পোকামাকড়, হিংসপ্রাণী ইত্যাদি থেকে মানুষ শারীরিকভাবে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশ্রয় প্রত্যাশা করে। শুধুই আশ্রয় নয় একটি সুন্দর, মনোরম এবং শক্তিশালী আশ্রয়স্থল প্রত্যেকটি মানুষই তার শারীরিক সুরক্ষার জন্য কামনা করে।
৪. নিরাপত্তা : নিরাপত্তা বলতে বুঝায় ‘Guarantee for saving’ সকল মানুষই শারীরিক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। সে যেন কোন ধরনের শারীরিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে না থাকে। অর্থাৎ কোন ধরনের শারীরিক আঘাত বা আক্রমণ থেকে সুরক্ষা চায়। এ নিরাপত্তা চাহিদা হতে পারে দু’রকম। যেমন-
ক. প্রাকৃতিক শক্তির হাত থেকে প্রত্যাশিত নিরাপত্তা।
খ. মনুষ্য কর্মকাণ্ড থেকে প্রত্যাশিত নিরাপত্তা।
৫. তৃষ্ণা : তৃষ্ণা মানুষকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তৃষ্ণার চাহিদা মানুষের জীবনে এতই প্রকট যে প্রচণ্ড তৃষ্ণা মানুষকে অনেক সময় দূষিত পানি পান করতে বাধ্য করে। মানুষ যে কোন উপায়ে তার এই তৃষ্ণা মিটাতে চায়। এক সময় আমাদের দেশে তৃষ্ণা মিটানোর জন্য পুকুর খাল বিলের পানি পান করা হতো। কিন্তু গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে এ চাহিদা পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৬. বিশ্রাম : মানুষ যখন কর্মব্যস্ত তাকে তখন তার দেহের অন্তক্ষরা গ্রন্থি, পেশীসমূহ সক্রিয় থাকে। কাজ করতে করতে এক সময় এসব পেশী ও গ্রন্থির শক্তি কমে আসে। ফলে ব্যক্তির মধ্যে কাজের শক্তি কমে যায় আর বিশ্রামহীনভাবে কাজ চলতে থাকলে সে অসুস্থ হতে পারে। কারণ প্রত্যেক মানুষের শরীরের সামর্থ্যের একটা নির্দিষ্ট স্তর বা মাত্রা আছে।তাই বিশ্রাম মানুষের অন্যতম শারীরিক চাহিদা হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্রাম ব্যক্তিকে ক্লান্তি দূর করে নতুন উদ্যমে কাজ করতে সহায়তা করে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, আসলে মানবজীবনে বহুমুখী চাহিদা বিদ্যমান। আর প্রত্যেকটি মানুষই চায় তার এসব চাহিদা পূরণ করতে। কখনও সে তা পূরণ করতে সমর্থ হয় আবার কখনও বা ব্যর্থ হয়।চাহিদা যদি পূরণ করতে সক্ষম হয় তবে তার মধ্যে আসে তৃপ্তিবোধ, বাড়ে আত্মবিশ্বাস, জীবনে আসে সমৃদ্ধি।আর যদি চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হয় তবে তার মধ্যে আসে হতাশা, ব্যর্থতা জীবনের প্রতি তার সৃষ্টি হয় বিতৃষ্ণা। তবে প্রত্যেকটি মানুষ যেন তার এসব শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারে সমাজকর্মের ছাত্র হিসেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশী।