মাঠকর্ম সংস্থাপনের ধারণা দাও।মাঠকর্ম সংস্থাপনের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?

অথবা, মাঠকর্ম সংস্থাপন বলতে কী বুঝ? মাঠকর্ম সংস্থাপনের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, মাঠকর্ম সংস্থাপনের সংজ্ঞা দাও। মাঠকর্ম সংস্থাপনের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, মাঠকর্ম সংস্থাপন কাকে বলে? মাঠকর্ম সংস্থাপনের প্রকৃতিসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
সমাজকর্মে মাঠকর্ম অনুশীলন অপরিহার্য। একটি পেশাগত বিষয় হিসেবে সমাজকর্মে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ অর্জন করতে হয়।১৯০৫ সালে আমেরিকায় সর্বপ্রথম পেশাগত সমাজকর্মের চর্চা শুরু হয়।এর পূর্বে সমাজকর্ম পেশাগত বিষয় ছিল না। সমাজকর্ম পেশাগত বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বেড়ে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়।যেমন আমেরিকা ও কানাডাতে একে বলা হয় FIELD PTACTICUM. আবার অনেক দেশে একে বলা হয় FIELD WORK (মাঠকর্ম) FIELD WORK PRACTICE. (মাঠকর্ম অনুশীলন)। দিল্লি স্কুল অব সোশ্যাল ওয়ার্ক -এ বিএ অনার্স সমাজকর্ম বিষয়ে ৬টি সেমিস্টারের প্রতিটি সেমিস্টারেই মাঠকর্ম প্রশিক্ষণ কোর্স চালু রয়েছে। সেখানে প্রতিটি সেমিস্টারে CONCURRENT FIELD WORK ( সহগামী মাঠকর্ম) -এর ব্যবস্থা রয়েছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পর্যায়ে চার বছরের কোর্সে প্রতি বছরই PRACTICAL FIELD WORK ও মাস্টার্স পর্যায়ে FIELD PROJECT কোর্স চালু রয়েছে।
মাঠকর্ম সংস্থাপন (Field Placement) : মাঠকর্মের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে (যেমন-এনজিও) প্রেরণ করতে হয়। সেখানে তারা সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা যেমন প্রয়োগ করতে পারে তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ আয়ত্ত করে সেগুলোও সমাজকর্মের জ্ঞানের সাথে যুক্ত করতে পারে। কানাডার রিয়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে ফিল্ড প্র্যাকটিকাম চালু রয়েছে।আমাদের দেশে অনার্স শেষ পর্ব, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি ও মাস্টার্স শেষ পর্বে মাঠকর্ম অনুশীলন চালু রয়েছে। মাঠকর্মের জন্য বিভিন্ন এজেন্সিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রেরণ করতে হয়।মাঠকর্মের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিয়োজিতকরণকে মাঠকর্ম সংস্থাপন (Field Placement) বলা হয় । অন্যভাবে বলা যায় তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পর একজন শিক্ষানবিস সমাজকর্মীকে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন ও তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগের জন্য নিয়োগ করাই হলো মাঠকর্ম সংস্থাপন। আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থীকে তিন মাসের জন্য মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাতে প্রেরণ করতে হয়। এই তিন মাসের মধ্যে তাদেরকে ৬০ কর্ম দিবস মাঠকর্ম প্রশিক্ষণে নিয়োজিত থাকতে হয়। ৬০ কর্ম দিবসে তাদেরকে প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা করে মোট ৪২০ কর্মঘণ্টা মাঠকর্ম অনুশীলন করতে হয়।আমাদের দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে প্রাকটিক্যাল-১ : ফিল্ড ভিজিট এবং অনার্স ৪র্থ বর্ষে FIELD WORK PRACTICE in Social Work নামে ৫০ নম্বরের একটি কোর্স এবং প্রাকটিক্যাল-
৩ : ফিল্ড ওয়ার্ক নামে ১০০ নম্বরের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষ, এমএসএস ১ম পর্ব ও মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে মাঠকর্ম অনুশীলনের ব্যবস্থা রয়েছে। কোন কোন দেশে পুরো একটি সেমিস্টারের পুরো অংশেই মাঠকর্ম প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রবর্তন করা হয়েছে।মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই মূলত সমাজকর্ম পেশাদারিত্বের মর্যাদালাভে ভূমিকা রাখে।
মাঠকর্ম সংস্থাপনের বৈশিষ্ট্য : মাঠকর্ম সংস্থাপন ের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে এ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. সমাজকর্মের শিক্ষার্থী : মাঠকর্ম সংস্থাপনের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক, এমএসএস প্রিলিমিনারি ও মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরই কেবল মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য বিভিন্ন এজেন্সিতে প্রেরণ করা হয়।
২. সরকারি বা বেসরকারি এজেলি : মাঠকর্ম সংস্থাপনের জন্য সরকারি বা বেসরকারি এজেন্সি বেছে নেয়া হয়।তবে এসব এজেন্সি হতে হয় সমাজকল্যাণমূলক কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট। নারী কল্যাণ, শিশু কল্যাণ, প্রবীণ কল্যাণ, যুব কল্যাণ, স্বাস্থ্য, মানসিক স্বাস্থ্য, দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের সংস্থাপন করা হয়।
৩. যৌথ তত্ত্বাবধান : শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের যৌথ তত্ত্বাবধানে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়।এখানে একজন এজেন্সি বা প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক ও একজন বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক থাকেন। বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক হচ্ছেন সমাজকর্ম বিভাগের একজন শিক্ষক।
৪. দল গঠন : শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের মাঠকর্ম সংস্থাপনের জন্য দল গঠন করতে হয়। একটি দলে ন্যূনতম দুজন থেকে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী থাকে । কোন কোন ক্ষেত্রে এর বেশি শিক্ষার্থীও থাকতে পারে।তবে একটি এজেন্সির জন্য আদর্শমান হচ্ছে ৪-৫ জন শিক্ষানবিস প্রেরণ করা।
৫. কাছাকাছি এলাকা : শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য কাছাকাছি এলাকার কোন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করতে হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে অপেক্ষাকৃত দূরের প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীদের সংস্থাপন করা যেতে পারে।
৬. ওরিয়েন্টেশন : মাঠকর্ম সংস্থাপনের জন্য ওরিয়েন্টেশন -এর গুরুত্ব অপরিহা। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সংস্থাপিত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পূর্ব ধারণা লাভ করতে পারেন।
৭. অনুপাত মেনে চলা : মাঠকর্মে প্রেরণের ক্ষেত্রে অনুপাত মেনে চলা হয় । একজন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে কতজন শিক্ষানবিস থাকবে বা একটি প্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষানবিস প্রেরণ করা হবে তা আনুপাতিক হারে বণ্টিত হয়।
৮. এজেন্সির চাহিদা : সংস্থাপনের ক্ষেত্রে এজেন্সির চাহিদার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে । এজেন্সি যদি শিক্ষানবিস
সমাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে স্বস্তিবোধ না করে তাহলে সেখানে শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের প্রেরণ না করাই ভালো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় মাঠকর্ম সংস্থাপনের কিছু নিয়মনীতি রয়েছে যেগুলো প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান ও প্রেরিত প্রতিষ্ঠান উভয়েরই মেনে চলতে হয়। এছাড়া শিক্ষানবিস সমাজকর্মী ও তত্ত্ববধানের দায়িত্বে নিয়োজিত সমাজকর্মীদেরকেও এসব নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d/