উৎস : ব্যাখ্যেয় পদ্যাংশটুকু মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিরচিত ‘ আত্মবিলাপ ‘ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে ।
প্রসঙ্গ : রাত্রের স্বপ্ন , বিদ্যুতের ঝিলিক আর মরীচিকার সাথেই আশা তুলনীয় । আশার এ স্বরূপ উদ্ঘাটন করে কবি উল্লিখিত উক্তি করেছেন এবং এ তিনটি ছলনাই যেন মানবজীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে তা কবি ব্যক্ত করেছেন ।
বিশ্লেষণ : মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী । এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষ নিত্যনিয়ত সুখের সন্ধানে ফেরে । সুখের সন্ধান করতে গিয়ে সে পড়ে আশার কুহকে । আশার নিগড়ে বন্দী মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সোনার হরিণ লাভের আশায় ছুটতে থাকে । শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে আক্ষেপে ফেটে পড়ে । তখন তার কাছে আশার স্বরূপটি ধরা পড়ে । আশার এ স্বরূপ সম্পর্কে কবি বলেছেন-
নিশার স্বপন সুখ সুখী যে কী সুখ তার ?
জাগে সে কাঁদিতে !
ক্ষণপ্রভা প্রভা দানে বাড়ায় মাত্র আঁধার
পথিকে ধাধিতে ।
মরীচিকা মরুদেশে নাশে প্রাণ তৃষা ক্লেশে ;
এ তিনের ছলসম ছলরে এ কু – আশার।
অর্থাৎ আশা রাতের স্বপ্ন , বিদ্যুতের আলো আর মরুভূমির মরীচিকার মতো । রাতের স্বপ্ন যেমন স্বপ্ন দ্রষ্টাকে কাঁদায় , বিদ্যুতের আলো যেমন পথিককে কেবল ধাঁধার মধ্যে ফেলে এবং মরুভূমির মরীচিকা যেমন তৃষ্ণার্তের প্রাণনাশ করে আশাও তেমনি মানুষকে হতাশার আগুনে পুড়িয়ে মারে । এ তিন জিনিসের ছলনার মতোই আশার ছলনা মানুষকে বিভ্রান্ত করে । কু – আশার বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষ জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে হাহুতাশ করে মরে । হতাশার গ্লানি মানুষকে তখন বিলাপ বিভোর করে তোলে । মন্তব্য : আশা মানুষের জীবনের নিয়ামক শক্তি হলেও কু – আশা তার জীবনকে ভুল পথে টেনে নিয়ে যায় । কু – আশা থেকে মানুষকে তাই দূরে থাকতে হবে ।