“ পতঙ্গ যে রঙ্গে ধায় , ধাইলি অবোধ , হায় ! না দেখিলি , না শুনিলি , এবে রে পরাণ কাঁদে ! ” — ব্যাখ্যা কর ।

উৎস : ব্যাখ্যেয় পদ্যাংশটুকু মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিরচিত ‘ আত্মবিলাপ ’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে ।

প্রসঙ্গ : মহাকবি এখানে আগুনের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে আগুনের দিকে ধাবমান নির্বোধ পতঙ্গের সাথে মানুষের তুলনা করে এ কথা বলেছেন ।

বিশ্লেষণ : মানুষ আশায় বসত করে । আশায় বুক বেঁধে সে সামনের দিকে এগিয়ে যায় । আশা তাকে প্রলুব্ধ করে সর্বদা ব্যস্ত রাখে । আশার ভেলায় চড়ে মানুষ জীবন সমুদ্রে পাড়ি জমায় । কিন্তু আশা যে কেবল তাকে মরীচিকার মতো ঘুরিয়ে মারে সে তা বুঝতে চায় না । প্রেম পাগল মানুষ সম্পর্কে কবি তাই উপমাসহকারে বলেছেন

“ প্রেমের নিগড় গড়ি পরিলি চরণে সাধে ;

কী ফল লভিলি ?

জ্বলন্ত পাবক শিখা লোভে তুই কাল ফাঁদে

উড়িয়া পড়িলি ? ”

অর্থাৎ প্রেমের শিকল পায়ে পরে মানুষ কেবল নিষ্ফল জীবন লাভ করে এবং জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে জ্বলে পুড়ে মরে । আগুনের শিখার সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে কীটপতঙ্গ আগুনের মধ্যে ঝাঁপ দেয় । সৌন্দর্য – পিপাসু পতঙ্গ নির্বোধের ন্যায় আগুনের তাপে যেমন দগ্ধীভূত হয় মানুষও তেমনি যশ , মান , খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠার লোভে আশারূপী আগুনের মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে নিজের সবকিছুকে হারায় । যখন সে এ অর্থহীন উন্মাদনার পরিণাম বুঝতে পারে তখন আর প্রতিকারের পথ খোলা থাকে না । তখন তার অন্তরাত্মা আক্ষেপে ফেটে পড়ে আর করুণ আত্মবিলাপে চারদিকে বেদনার্ত করে তোলে । কুহকিনী আশা মানুষের সবকিছু গ্রাস করে এমনিভাবে ঘুরিয়ে মারে ।

মন্তব্য : আশা আগুনের মতোই সৌন্দর্যময়ী । তাই পতঙ্গের মতো মানুষ আশার আগুনে দগ্ধীভূত হয়ে জীবনকে শেষ করে ফেলে।