উত্তর : আলোচ্য অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পের গহুরালির সম্পর্কে ব্যক্ত
করেছেন গল্পকার।সবদিক থেকে নিঃস্ব গহুরালির অবস্থা চিত্রিত করতে গিয়ে গল্পকার এই কথাগুলো বলেছেন। গহুরালি মাউলতলা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক। সংসারে তার প্রাচুর্য ছিল না। ছিল না অগাধ ঐশ্বর্যের দীপ্তি। কিন্তু ছিল প্রশান্তি । স্ত্রী আর পাঁচ কুড়া জমি নিয়ে মোটামুটি তার দিন সুখেই কাটছিল। কিন্তু এই সুখ তার বেশি দিন সইল না। নতুন রাস্তা হবার সুবাদে নগরের নানাবিধ ব্যাধি ও বিকার এসে মাউলতলার জীবনকে কলুষিত করে ফেলে। আসে যুদ্ধের উত্তাপ। ছায়া ফেলে মন্বন্তর। বেড়ে যায় জিনিসপত্রের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ক্রমশ চলে যেতে থাকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে। ফলে মুশকিলে পড়ে দরিদ্র কৃষক গহুরালি। বেঁচে থাকার জন্য তাকে গ্রহণ করতে হয় নানা ধরনের জীবিকা। যে প্রশান্তিময় স্নিগ্ধ জীবন সে এতদিন কাটিয়ে আসছিল, মন্বন্তরের উত্তাপে তা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। জীবন থেকে আনন্দ নির্বাসিত হয়। তার জায়গা দখল করে কষ্ট আর দুর্ভোগ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরও এক নিষ্ঠুর প্রবঞ্চনা নিয়ে জীবন অপেক্ষা করছিল তার জন্য। এক সকালে ঘুম থেকে উঠে সে তার বউটিকে আর কোথাও খুঁজে পায় না। অনেক ছোটাছুটি, খোঁজাখুঁজির পর সে জানতে পারে যে শহর থেকে আসা এক দালালের সাথে তার বউ চলে গেছে শহরের দিকে। অথচ এই দালালটিকে গহুরালি ভেবেছিল তার দুঃসময়ের বন্ধু, দুর্দিনের ত্রাণকর্তা। মন্বন্তরের কারণে সৃষ্ট খাদ্যাভাব গহুরালির জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছিল। শুধু দুটি অন্ন খুঁটে কোনরকমে জীবনধারণ করার গস্নানি তাকে পীড়িত করে তুলেছিল আগেই। কিন্তু এই গস্নানিকে সে মনের জোরে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছে। আর এ শক্তি সে পেয়েছে তার ঘর থেকেই, যে ঘরে বউ ছিল সমব্যথী বন্ধুর মত তার পাশে। কিন্তু সেই বউ যখন শহুরে দালালের সাথে পালিয়ে গেল তখন তার আর সান্ত্বনার কোন আশ্রয়ই রইল না। ভিতরে বাইরে সবখানেই সে হয়ে পড়ল নিঃস্ব। ফলে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়া ছাড়া তার কোনই গত্যন্তর রইল না।
মন্তব্য : দুর্ভিক্ষের সময় গহুরালি কষ্ট পেয়েছিল বাইরে থেকে। কিন্তু বউ চলে যাওয়ার পর সে কষ্ট পেল অন্তরে।