মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের গুরুত্ব বর্ণনা কর।

অথবা, মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের তাৎপর্য লেখ
অথবা, মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা লেখ।
অথবা, মনোসামাজিক অনুধ্যানের ক্ষেত্রে তথ্যসংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা কী?
অথবা, মনোসামাজিক অনুধ্যানের ক্ষেত্রে তথ্যসংগ্রহের তাৎপর্য কী?
উত্তরা৷ ভূমিকা : ব্যক্তি সমাজকর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহ বা অনুষ্ঠান। এ পর্যায়ের কার্যকারিতার উপর ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রক্রিয়ার সার্বিক সাফল্য নির্ভর করে। সেবাগ্রহীতার সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য এবং সমস্যা সমাধানে সেবাগ্রহীতা ও এজেন্সির সম্পদ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ এ স্তরে সম্পন্ন করতে হয়।মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের গুরুত্ব : এইচ. এইচ. পার্লম্যান (H. H. Perlman) তাঁর ‘Social Case Work : A Problem Solving Proces’ গ্রন্থে তথ্যসংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের গুরুত্বের কথা বলেছেন।
১. সমস্যা উপস্থাপনের প্রকৃতি : সেবাগ্রহীতার সমস্যা উপস্থাপন ভঙ্গি হতে সমস্যার মূল উৎস উদঘাটনের প্রচেষ্টা চালানো।সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, কি কি অসুবিধা দূরীকরণে আগ্রহী এবং সমস্যার সমাধান সে কিভাবে চায় তা
যথাযথভাবে নির্ণয় করার ক্ষেত্রে মনোসামাজিক তথ্য আহরণ গুরুত্বপূর্ণ।
২. সমস্যার প্রকৃত তাৎপর্য : মনোদৈহিক এবং সামাজিক কল্যাণের দিক থেকে ব্যক্তি, পরিবার বা জনসমষ্টির উপর সমস্যার প্রতিক্রিয়া, প্রভাব এবং গুরুত্ব সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ ও অনুধাবন করা। এছাড়া মূল সমস্যা এবং সমস্যার প্রতি ব্যক্তির অনুভূতি নির্ণয়ের চেষ্টা করা এ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৩. সমস্যার কারণ, বহিঃপ্রকাশ ও পূর্বাবস্থা সম্পর্কে জানা : কোন পরিস্থিতিতে এবং কি অবস্থার প্রেক্ষিতে সমস্যার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে সে বিষয়ে তথ্যসংগ্রহ করা। সার্বিক সমস্যাটির বিস্তারিত তথ্যসংগ্রহ করে এমনভাবে বিন্যস্ত করা,যাতে সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিকের কার্যকারণ (Cause-effect-cause) শক্তিসমূহ চিহ্নিত করা যায়।
৪. সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত উদ্যোগ : সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে সাহায্যার্থী যেসব চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা করেছে তা সমাজকর্মী জানবেন। বাস্তবে সে লক্ষ্যে যে সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যক্তি গ্রহণ করেছে সমাজকর্মী সে বিষয়েও অবহিত হবেন। এছাড়া সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা তার পরিবারের মধ্যে এমন কোনো বস্তুগত অথবা অবস্তুগত সম্পদ রয়েছে কি না চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ।
৫. সেবাগ্রহীতা এজেলি থেকে কি প্রত্যাশা করে এবং কি ধরনের সমাধান চায় : সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান হতে সেবাগ্রহীতার প্রত্যাশা এবং সাহায্য লাভের জন্য সে কি ধরনের আশা পোষণ করে এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার নিজের ভূমিকা কি রয়েছে বলে মনে করে ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য দেয়া প্রয়োজন। এসব বিষয়ে সমাজকর্মীকে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে মনোসামাজিক তথ্য আহরণে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
৬. প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ধরন ও ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে এর সেবা কর্মসূচি : ব্যক্তির সমস্যা সমাধান কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠান কোন ধরনের সাহায্য প্রদান করতে পারে এ বিষয়ে ব্যবহার উপযোগী প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ নির্ধারণ করতে হবে।সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজন হলে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে।কখনো সমস্যার প্রকৃতি অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে অন্য প্রতিষ্ঠানে Refer করাও যেতে পারে। এক্ষেত্রে তথ্যসংগ্রহ আহরণ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের মাধ্যমে সাহায্যার্থী সম্পর্কে জানা যায় এবং তার সমস্যা সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করা যায়।এতে সমস্যার সমাধান দেয়া সহজ হয়।