উত্তর: ভূমিকা: মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা হলো মনোবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহার করে মানব মনস্তত্ত্বের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, এবং ব্যবহারকারীদের মানসিক প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং আদান-প্রদান করা। এটি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সাধারণভাবে ব্যবহার হয়।শিল্পক্ষেত্রে অভীক্ষা তত্ত্বাবধানে নির্মাণশীল বা কৃত্রিম কর্ম সম্পর্কে অভিক্ষেপণমূলক হতে পারে, যেমন মূর্তিশিল্প, চিত্রকলা, সিনেমা, নৃত্য, গান, থিয়েটার ইত্যাদি। এই অভীক্ষাগুলি নির্মাণের প্রক্রিয়া, রচনা, আলোচনা, এবং পার্দায় প্রদর্শন সহ সম্পূর্ণ শিল্প প্রদর্শন সম্পর্কে মনোবৈজ্ঞানিক অনুশাসন দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
ব্যবহৃত অভিক্ষেপণমূলক অভীক্ষা মূলত তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া হয়, যেটি তথ্য নমূনার এবং সাক্ষরী আলোচনা দ্বারা সম্পর্কিত বা সংজ্ঞানাত্মক জ্ঞান নমূনার সাথে সম্পর্কিত।আপনি যদি বিশেষ বিষয়ে বা আরও বিস্তারিত জানতে চান তা হলে অনুগ্রহ করে বলুন, আমি সাহায্য করতে পারি।
মনোবৈজ্ঞানিক/মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা : অভীক্ষা বলতে কোনোকিছু পরিমাপের কৌশলকে বুঝায়। আর মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা বলতে বুঝায়, যার মাধ্যমে ব্যক্তির কোনো বিশেষ কার্যসম্পাদন করার মানসিক দক্ষতা ও মানবিক গুণাবলি রয়েছে কিনা তা যাচাই করা যায়। অন্যকথায় বলা যায়, ব্যক্তির কোনো বৈশিষ্ট্য বা আচরণের আদর্শায়িত পরিমাপকে মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা বলে। এ অভীক্ষার সাহায্যে ব্যক্তির কোন বিশেষ কার্যসম্পাদন করার মানসিক এবং মানবিক গুণাবলি আছে কি না তা যাচাই করা যায় । আর একটু সহজভাবে বলা যায়, মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষা হলো। এমন একটি আধুনিক কৌশল, যার মাধ্যমে প্রার্থী সম্পর্কে পূর্ব থেকে অনুমান করা যায় এবং তাকে প্রশিক্ষণ দিলে সে কতটুকু সফলতা অর্জন করবে তা অনুধাবন করা যাবে।মনোবিজ্ঞানী উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে আচরণের সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণকল্পে কতকগুলো মানবিক গুণাবলি এবং বৈশিষ্ট্য যেমন- জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব, ঝোঁক, আগ্রহ পরিমাণাত্মকভাবে পরিমাপ করা হয় তাকে মনোবৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা বলে ।
অভিক্ষেপণ পদ্ধতি : অভিক্ষেপণ পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মীর ব্যক্তিত্বকে পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা হয়। এতে অভীক্ষার্থী মিথ্যা উত্তর দিতে পারে না। এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে ‘এমন কতকগুলো সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়, যেগুলো অস্পষ্ট, অনির্দিষ্ট, অসংগঠিত এবং অসম্পূর্ণ। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে গিয়ে ব্যক্তি নিজের অজান্তে পরোক্ষভাবে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা ভাবাবেগ প্রভৃতি প্রকাশ করে। অর্থাৎ ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিত্বকে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করে। তবে এই অভীক্ষাগুলোর ফলাফল ব্যাখ্যা এবং এগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের মূল্যায়ন করা খুবই দুরূহ কাজ। অভীক্ষেপণ পদ্ধতির ব্যক্তিত্ব অভীক্ষাগুলোর মধ্যে দুটি পরিচিত অভীক্ষা হচ্ছে-
ক. রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা এবং
খ. কাহিনি সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা।
ক. রোশাক কালির ছাপ অভীক্ষা : ১৯২১ সালে সুইজারল্যান্ডের মনোচিকিৎসক হারম্যান রোশাক এ অভীক্ষাটি আবিষ্কার করেন। এই অভীক্ষাটি বিভিন্ন প্রকৃতি ও রঙের ১০টি কালির ছাপবিশিষ্ট কার্ড নিয়ে এ অভীক্ষাটি গঠিত। তাঁর নামানুসারে এই অভীক্ষাটি রোশাক কালির ছাপ নামে পরিচিত। রোশাক অভীক্ষার ১০টি কালির ছাপের মধ্যে ৫টি কালো ও ধূসর বর্ণের, ২টি কালো ও লাল বর্ণের এবং অবশিষ্ট ৩টি অন্যান্য বর্ণের। কার্ডগুলো ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। অভীক্ষার্থীকে একটি করে কার্ড দেওয়া হয় এবং সে কি দেখেছে তা বলতে বলা হয়। সে যতক্ষণ খুশি তা দেখতে পারে তবে একটি কার্ড দেখতে কত সময় লাগে তা লিখে রাখা হয়। এভাবে অভীক্ষার্থীকে ১০টি কার্ড দেখানো শেষ হলে তাকে দ্বিতীয়বার কার্ডগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং কার্ডের কোন অংশ দেখেছে তা নির্দেশ করতে বলা হয়। অভীক্ষার্থীর উত্তরগুলো তিনটি বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয় । যথা :
১. পরীক্ষণপাত্র সমগ্র ছবিটির বর্ণনা করেছে, নাকি ছবিটির আংশিক বর্ণনা করেছে : কোনো ব্যক্তি যদি সম্পূর্ণ ছবির ওপর গুরুত্ব প্রদান করে তাহলে বুঝা যাবে সে বিমূর্ত চিন্তা ও তাত্ত্বিক জ্ঞান পছন্দ করে। আর যদি সে আংশিক বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে, তাহলে বুঝা যাবে সে খুঁটিনাটি বা সামান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে।
২. ছবির আকৃতি রং বা কোনোকিছু দ্বারা তার প্রতিক্রিয়া প্রভাবিত হয়েছে কি না : কোনো ব্যক্তি যদি অধিক রঙের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে তাহলে বুঝা যাবে তারমধ্যে অসংযত আবেগ বিদ্যমান। কিন্তু সে যদি রং এবং আকৃতি উভয়ের ওপর গুরুত্ব | দিয়ে থাকে তাহলে বুঝা যাবে তার আবেগের প্রকৃতি অবাধ ও সাবলীল।
৩. পরীক্ষণপাত্র এ ছবিগুলোকে কি হিসেবে দেখেছে : ব্যক্তি যদি মানুষের ছবি বা গতিশীল মানুষের ছবি দেখে থাকে তাহলে তার অধিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যাবে। আর যদি জীবজন্তুর ছবি দেখে থাকে তাহলে বুঝা যাবে, তার চিন্তার পরিধি খুবই সীমিত।
খ. কাহিনি সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা : ১৯৩৫ সালে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী মারে (Murry) ও মর্গান (Morgan) সর্বপ্রথম কাহিনি সংপ্রত্যক্ষণ অভীক্ষা প্রণয়ন করেন। এ অভীক্ষায় মোট ২০টি কার্ড থাকে। এর মধ্যে ১৯টি কার্ড ছবিযুক্ত এবং শুধু একটি কার্ড ফাঁকা বা সাদা থাকে। পরীক্ষণপাত্রকে এ অভীক্ষার প্রত্যেকটি ছবি থেকে একটি কাহিনী রচনা করতে বলা হয়। কাহিনি রচনার ধারা হবে ছবিটিতে কি দেখা যাচ্ছে, কি ঘটছে, ছবিতে লোকগুলো কি ভাবছে, কীভাবে কাহিনির সূত্রপাত হয়েছিল এবং এর পরিণতি কি হবে। পরীক্ষণ পাত্র প্রত্যকটি ছবি থেকে একটি করে গল্প বা কাহিনি লেখার পর তাকে ফাঁকা বা সাদা কার্ডটি দেওয়া হয়। পরীক্ষণপাত্রকে সাদা কার্ডে একটি ছবি কল্পনা করে নিয়ে সে সম্পর্কে তাকে একটি গল্প বা কাহিনি লিখতে বলা হয় । পরীক্ষণ কাহিনির মূল বিষয়বস্তু উদ্ঘাটন করতে চেষ্টা করেন এবং তা থেকে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রেষণা এবং দ্বন্দ্বসমূহ অনুসন্ধান করেন। পরীক্ষণপাত্র ছবিগুলো দেখে যেসব কাহিনি রচনা করে তার সাহায্যে পরীক্ষক পরীক্ষণপাত্রের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, মনোভাব, প্রেষণা, আবেগ, কল্পনাশক্তি, দূরদৃষ্টি প্রভৃতি জানার চেষ্টা করেন এবং এর সাহায্যে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নির্ণয় করেন। পরীক্ষণপাত্রের গল্প বা কাহিনিগুলোতে ব্যক্তিত্বের সাফল্যাঙ্ক নিরূপণ করা হয়।
ক. গল্পের ধরন, দৈর্ঘ্য, ভাষা, মৌলিকতা, বিষয়বস্তু, বৈচিত্র্য সংগঠন ক্ষমতা প্রভৃতি ।
খ. কাহিনির মূল বক্তব্য, ব্যর্থতা, দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।
গ. একাত্মীকরণ, নায়ক নির্বাচন ইত্যাদি ।
ঘ. কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তি ও যৌনতা সম্পর্কে ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া । কাহিনির উপসংহারের সাথে অন্যান্য – অংশের সম্পর্ক।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উপযুক্ত কর্মে উপযুক্ত কর্মী নিয়োগের জন্য ব্যক্তিত্ব মূল্যায়নের গুরুত্ব অপরিহার্য। সাম্প্রতিককালে কর্মের ক্ষেত্রে ভিন্নতা এবং বৈচিত্র্যের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াতে বিশেষ বিশেষ কর্মে সাফল্য অর্জনের জন্য এসব কর্মের উপযোগী মানসিক সংগঠন বা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম বলে প্রমাণিত হয়েছে। পরিশেষে বলা যায় যে, কোনো বিশেষ কর্মের জন্য কি ধরনের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক যথার্থ তা নির্ধারণের জন্য ব্যক্তিত্ব পরিমাপ করা জরুরি।