ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ।”- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পে ভিক্ষাবৃত্তি ভিখুর কাছে যে নতুন মূল্যবোধে ধরা দিয়েছে তা গল্পকার উপস্থাপন করেছেন। ভিখু দুর্ধর্ষ ডাকাত হলেও তার ডান হাত অকেজো হয়ে যাওয়ার ফলে ডাকাতি পেশা ত্যাগ করে পেটের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করে। ভিখু অল্প দিনের মধ্যে ভিক্ষা করার সব নিয়ম-কঝুনন শিখে ফেলে। শরীর এখন আর সে পরিষ্কার করে না, মাথার চুল ক্রমেই জট বাঁধতে আরম্ভ করেছে। ভিক্ষা করে সে একটা কোট পেয়েছে, কোটটা সে গায়ে চাপিয়ে রাখলে শুকনো হাতের জায়গাটি সে বের করে রাখে- এটা তার ভিক্ষাবৃত্তিতে বড় একটা বিজ্ঞাপন। কোটের ডান হাতটা বগলের কাছ হতে ছিঁড়ে বাদ দিয়েছে। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাজারের কাছে রাস্তার ধারে একটা তেঁতুল গাছের নিচে বসে সে ভিক্ষা করে। সারাটা দিন শ্বাস- টানা কাতরানির সঙ্গে সে বলে যায় : “হেই বাবা একটা পয়সা : আমার দিলে ভগবান দিবে : হেই বাবা একটা পয়সা।” ভিখুর সামনে দিয়ে সারাদিনে হাজার দেড়েক লোক যাতায়াত করে এবং গড়ে প্রতি পঞ্চাশ জনের মধ্যে একজন তাকে পয়সা বা আধুলি দেয়। আধুলির সংখ্যা বেশি হলেও সারাদিনে ভিখু পাঁচ-ছ আনা রোজগার হয়। কিন্তু সাধারণত প্রতিদিন তার উপার্জন আট আনার কাছাকাছি হয়। হাটবারে তার উপার্জন এক টাকার নিচে নামে না। তার প্রাচীন শ্লোক : “ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ”- অর্থাৎ ‘ভিক্ষা করা উচিত নয়’ কথাটি তার কাছে মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয়। অতএব, এ পর্যায়ে এসে বলা যায়, ভিক্ষাবৃত্তি ভালো না হলেও তা ভিখুর জীবনে কিছুটা হলেও আর্থিক নিরাপত্তা এনে দিয়েছে— তাই তার কাছে মনে হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি ভালো নয় বা ভিক্ষা করা উচিত নয় কথাটি আসলে অসত্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf/