অথবা, সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমর্থনমূলক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে প্রত্যক্ষ বা সমর্থনমূলক পদ্ধতি কী?
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে প্রত্যক্ষ বা সমর্থনমূলক প্রক্রিয়া বলতে কী বুঝ? ব্যক্তি সমাজকর্মে প্রত্যক্ষ পদ্ধতি কী?
অথবা, ব্যক্তি সমাজকর্মে প্রত্যক্ষ বা সমর্থনমূলক পদ্ধতি সম্পর্কে লেখ।
উত্তর ভূমিকা : প্রত্যক্ষ বা সমর্থনমূলক পদ্ধতি বলতে এমন একটি পদ্ধতিকে বুঝায় যা সাহায্যার্থীকে সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে শক্তি সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করে। ফলে ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টায় সমস্যা সমাধানে বা মোকাবিলায়
সক্ষম হয়ে উঠে।
ব্যক্তি সমাজকর্মের প্রত্যক্ষ সমাধান পদ্ধতিসমূহ : প্রত্যক্ষ সমাধান পদ্ধতির ক্ষেত্রে একজন সমাজকর্মী নিম্নোক্ত ধাপ বা কৌশলগুলো অনুসরণ করে থাকেন :
১. পুনঃনিশ্চয়তা প্রদান : সাহায্যার্থী যখন কোনো সমস্যায় পতিত হয় তখন সে নিজের শক্তি, সামর্থ্য, যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে নিজের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। নিজের উপরে ব্যক্তির এক ধরনের অনাস্থা বা সন্দেহের সৃষ্টি হয়।এক্ষেত্রে সমাজকর্মী এ কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি সাহায্যার্থীকে এর যোগ্যতা, দক্ষতা, সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। ব্যক্তি এভাবে আস্তে আস্তে নিজের উপর আস্থা ফিরে পান। ফলে ব্যক্তির মধ্যে গতিশীলতার সঞ্চার ঘটে।
২. সহায়তাধর্মী তথ্য প্রদান : সাহায্যার্থীর কাছ থেকে অনেক সময় তার সমস্যার ধরন এবং এর সমাধানের লক্ষ্যে করণীয় কি তা জানতে চাওয়া হয়।এক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় সাহায্যার্থী যে বক্তব্য প্রদান করে তার মধ্যে অনেক ধরনের তথ্যগত শূন্যতা পরিলক্ষিত হয়। সাহায্যার্থীর তথ্যগত উক্ত শূন্যতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এ কৌশল প্রয়োগ করা হয়।ফলে ব্যক্তি তার অভ্যন্তরীণ শূন্যতা থেকে মুক্ত হয় এবং সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
৩. যৌক্তিক আলোচনা : সাহায্যার্থীর সাথে সমাজকর্মী এ পর্যায়ে তার সমস্যা সম্পর্কে, অর্থাৎ সমস্যার সার্বিক দিক সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ আলোচনায় লিপ্ত হন। ফলে সাহায্যার্থী তার সমস্যা সঠিকভাবে উপলব্ধি, প্রত্যক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে
সক্ষম হয়। কারণ যৌক্তিক আলোচনা সাহায্যার্থীকে তার অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করে। সে পরবর্তীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে।
৪. প্রদর্শনমূলক আচরণ : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি অনেক সময় তার প্রয়োজন ও চাহিদা নিজে নিজে নির্ণয় করে তা মিটাতে প্রবৃত্ত হয়। কিন্তু সে তা যথাযথভাবে মিটানোর উপায় নির্ধারণ ও প্রয়োগে অক্ষম হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী (প্রয়োজনীয়/গৃহীত) অনুসৃত কৌশল নির্ধারণ করে তা কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা সাহায্যার্থীকে প্রদর্শন করে থাকেন।এ প্রদর্শনমূলক প্রক্রিয়ার প্রভাব সাহায্যার্থীর ধারণা, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গি ও শারীরিক অনুভূতি সব দিককেই প্রভাবিত করে!
৫. উপদেশ ও নির্দেশনা : সাহায্যার্থী যখন তার সমস্যা সমাধানে বা মোকাবিলায় গঠনমূলক তৎপরতা গ্রহণে বাধাগ্রস্ত হয় তখন তাকে সমাজকর্মী প্রয়োজনীয় উপদেশ ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।এক্ষেত্রে ব্যক্তির অজ্ঞতা, ভয়ভীতি,
উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি আবেগীয় নেতিবাচক অবস্থা দূরীকরণে সাহায্যার্থী সমাজকর্মীর উপদেশ ও নির্দেশনা লাভ করে থাকেন।
৬. বাস্তব সীমা নির্ধারণ : ব্যক্তি যখন মনোসামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে তখন দেখা যায় তার আচরণ অনেক সময় তার নিজের কিংবা তার পরিবার ও সমাজের জন্য সুবিধাজনক বলে বিবেচিত হয় না।এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে সংযত করা জরুরি হয়ে পড়ে। ফলে তার আচরণের ‘সীমা নির্ধারণের’ মাধ্যমে ব্যক্তির ‘অহম’ শক্তিকে জাগিয়ে তোলা হয়।ফলে ব্যক্তির মধ্যে অধিকতর অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শনের মাত্রা হ্রাস পায়। এ পদ্ধতি কৌশল তখনই প্রয়োগ করা যায় যখন রোগী সমাজকর্মীর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
৭. মুক্ত আলোচনা : মনোসামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভাবাবেগ দ্বারা তাড়িত হয়। এমতাবস্থায় তাদেরকে বিভিন্ন সামাজিক কিংবা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে সমাজকর্মী মুক্ত আলোচনায় নিয়োজিত করেন। ফলে সাহায্যার্থী ভাবাবেগ থেকে বেরিয়ে এসে বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে তার মধ্যে সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৮. সরাসরি হস্তক্ষেপ : অনেক সময় সাহায্যার্থী দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজের আচার-আচরণ পরিচালনা করে। যেমন- কোনো সাহায্যার্থী একই বক্তব্য বার বার বলছে। তখন তাকে সমাজকর্মী
সরাসরি এক কথা বার বার বলার জন্য নিষেধ করবেন। এতে করে ব্যক্তির মধ্যে জড়তা দূর হয় এবং সে সামাজিক ভূমিকা পালনের শক্তি অর্জন করে।
৯. অভ্যাসগত আচরণ অনুশীলন : এ প্রক্রিয়ায় সাহায্যার্থীকে তার সমস্যা মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোনো একটি প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকরী ধারাবাহিক আচরণ করতে অভ্যস্ত করা হয়।যেমন- কোনো সাহায্যার্থীকে বলা হলো আপনি এখন থেকে প্রতিদিন খুব সকালে উঠে নামাজ আদায় করবেন। অতঃপর একটু ব্যায়াম করবেন এবং এভাবে তাকে অভ্যস্ত করানোর মাধ্যমে আচরণগত পরিবর্তন আনা হয়।
১০. আত্মসচেতন প্রক্রিয়া : এ পর্যায়ে সাহায্যার্থীকে তার পরিবার,আত্মীয়স্বজন,সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে বুঝতে এবং এদের মধ্যে নিজের অবস্থান সম্পর্কে উপলব্ধি করতে সহায়তা করা হয়। যেমন- কোনো একজন শিক্ষিত যুবক চাকরি পাবে না এ ভয়ে ভীত হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। এ অবস্থায় তাকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করা যে আপনি একজন শিক্ষিত ব্যক্তি। আপনার চাকরির সম্ভাবনা মোটেও সংকুচিত নয়। এভাবে সহায়তা করা। এতে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া কতকগুলো ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর তাই এ প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা মূলত নির্ভর করে ধাপগুলো কতটা কার্যকরভাবে অনুসরণ করা হয়েছে তার উপর। আর ব্যক্তির মনোসামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়ার অবদান ব্যক্তি সমাজকর্মে যে অপরিসীম তা বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না।