পেশাগত সম্পর্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ লিখ।

অৰ্থবা, পেশাগত সম্পর্কের উদ্দেশ্যগুলো কী কী?
অথবা, পেশাগত সম্পর্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিৎ?
অথবা, যেসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পেশাগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় তা লেখ।
অথবা, পেশাগত সম্পর্কের উদ্দেশ্য কী?
অথবা, রেপোর্ট এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : পেশাগত সম্পর্ক বা র‍্যাপোর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির সমস্যার সমাধান। এ সম্পর্কে Compton এবং Galaway বলেন, “The purpose of the rapport was described as creating and atmosphere. The development of personality, a better solution of client problems, the means for
carrying out function stating and focusing reality and emotional problems and helping the client make a more acceptable adjustment to a personal problem.”
পেশাগত সম্পর্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : Compton এবং Galaway এর বক্তব্যের আলোকে আমরা পেশাগত সম্পর্কের নিম্নোক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে পারি:
১. সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়া : র‍্যাপো বা পেশাগত সম্পর্কের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সাহায্যার্থীর সমস্যার ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানা। সাহায্যার্থী আর্থসামাজিক, মনো-দৈহিক না অন্য কোনো সমস্যায় জড়িত পেশাগত সম্পর্কের মাধ্যমে তা জানা যায়।
২. সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ভাবন : ব্যক্তির সমস্যার ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর সে সমস্যাকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাধানের পন্থা উদ্ভাবন করাও পেশাগত সম্পর্কের একটি অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
৩. অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি : র‍্যাপোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ব্যক্তি ও সমাজকর্মীর পারস্পরিক সহযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে পেশাগত সম্পর্ক ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
৪. আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা : সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করে তোলাও র‍্যাপোর অন্যতম উদ্দেশ্য। আমরা জানি, সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে হতাশা, দুর্বলতা বিরাজ করে, সে অসহায়ত্ব অনুভব করে,নিজেকে বড় একা মনে করে, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে আত্মপ্রত্যয় জাগিয়ে তোলা র‍্যাপোর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
৫. বাস্তব তথ্যসংগ্রহ : পেশাগত সম্পর্কের অপর একটি উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির সমস্যা সম্পর্কিত বাস্তব তথ্যসংগ্রহ করা। সমাজকর্মী ব্যক্তির অর্থনৈতিক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক বা অন্য কোনো সমস্যা বিষয়ক তথ্য পেশাগত সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারেন।
৬. দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া : পেশাগত সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। সমাজকর্মী এর সাহায্যে জানতে পারেন সাহায্যার্থীর সমস্যা কি ও সমস্যার গভীরতা কতটুকু।
৭. ব্যক্তিত্বের ধরন সম্পর্কে জানা : ব্যক্তির সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির ধরন সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।এ কারণে পেশাগত সম্পর্কের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো, ব্যক্তির ব্যক্তি ত্বর ধরন সম্পর্কে অবহিত হওয়া।
৮. পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা : পারিপার্শ্বিক অবস্থাও ব্যক্তির সমস্যার সমাধানের জন্য দায়ী হতে পারে। এ কারণে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কেও অবহিত হওয়া যায়।
৯. সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি : পেশাগত সম্পর্কের অপর একটি লক্ষ্য হলো ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা। সাহায্যার্থী যাতে সফল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে র‍্যাপো সেক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
১০. আচরণকে বাঞ্ছিত করা : ব্যক্তির আচরণকে বাঞ্ছিত ক্ষেত্রে প্রভাবিত করা র‍্যাপোর একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।সমাজকর্মী ব্যক্তিকে বুঝিয়ে, প্রণোদিত করে অথবা সমাজকর্মের পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যক্তির আচরণকে প্রত্যাশিত পথে পরিবর্তন করতে পারেন।
১১. সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ : ব্যক্তির সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন করা এবং ব্যক্তির নিজের সমস্যা নিজের দ্বারা সমাধানের লক্ষ্যে ব্যক্তিকে সক্ষম করে তোলা পেশাগত সম্পর্কের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য।
১২. উপশম : ব্যক্তির মধ্যে অনেক গোপন ব্যথা-বেদনা, হতাশা, কষ্ট, যন্ত্রণা ইত্যাদি লুকিয়ে থাকে। এসব লুক্কায়িত যন্ত্রণা থেকে ব্যক্তিকে পরিত্রাণ দেয়াও পেশাগত সম্পর্কের উদ্দেশ্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ব্যক্তির সমস্যার কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার, ব্যক্তির মধ্য থেকে হতাশা ও ভয়ভীতি দূর করে ব্যক্তিকে তার সামাজিক ভূমিকা যথাযথভাবে পালনে সক্ষম করে তোলাই পেশাগত সম্পর্কের মূল উদ্দেশ্য।পেশাগত সম্পর্ক ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের মূলভিত্তি প্রস্তুত করে।