বিচ্যুতিমূলক আচরণ ব্যাখ্যায় লেবেলিং তত্ত্ব (Labelling theory) বলতে কী বুঝ?

অথবা, বিচ্যুতিমূলক আচরণ ব্যাখ্যায় ‘The labelling theory’ ও ‘Sub-culture theory’ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বিচ্যুতিমূলক আচরণ ব্যাখ্যায় লেবেলিং তত্ত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে জনসাধারণ গণতন্ত্রের প্রতি তাদের আস্থা প্রকাশ করছে। সকলেই ভাবছে গণতন্ত্রের মাধ্যমেই সম্ভবত মানবতার মুক্তি। কিন্তু সমাজের উঁচুতলার কিংবা শাসকশ্রেণী সেভাবে মানুষের মুক্তি কামনা করছে না। তারা গণতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, কিন্তু জনকল্যাণমূলক কাজ না করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করছে। এ ক্ষমতাশালী স্বার্থবাদী শ্রেণীর উদ্দেশ্য ও চিন্তা হচ্ছে কেবলমাত্র নিজেদের উন্নতি। অপরের ক্ষতিসাধন করতেও এ স্বার্থপর শ্রেণী দ্বিধান্বিত হয় না। সমাজের ক্ষমতাসীনদের এরূপ শোষণের ফলে অনেকেই বিচ্যুতিমূলক আচরণ করতে বাধ্য হচ্ছে।
লেবেলিং তত্ত্বের ভিত্তি : বিচ্যুতি ও অপরাধমূলক আচরণের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রথমদিকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু খুব অল্প সময়ের ভিতরেই অলৌকিক শক্তিকে অস্বীকার করে মনস্তাত্ত্বিক এবং সমাজতাত্ত্বিক বিভিন্ন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। বিচ্যুতিমূলক আচরণের জন্য ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পাশাপাশি তার সামাজিক প্রেক্ষাপটকেও গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমান আধুনিক শাসনব্যবস্থা যখন জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয় না, তখন জনসাধারণ বিচ্যুত আচরণ করতে বাধ্য হয়। ব্যক্তির উপর কোন মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার ফলেও যে বিচ্যুতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে মতামত হাওয়ার্ড বেকার সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন। বিচ্যুতির মনস্তাত্ত্বিক এবং সমাজতাত্ত্বিক তত্ত্বগুলো অস্বীকার করে অপরাধবিজ্ঞানী হাওয়ার্ড বেকার বিচ্যুতি সম্পর্কে যে নতুন ধারার বিকাশ করেন তাকে বলা হয় বিচ্যুতিমূলক আচরণ সংক্রান্ত Labelling thebry বা চিহ্নিতকরণ তত্ত্ব বেকার পূর্বের তত্ত্বগুলোর বিচ্যুতি সম্পর্কিত মতামতের সমালোচনা করেন। তাঁর মতে, সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বগুলোতে বিচ্যুতিকারী ব্যক্তি বা Deviant কে একটি ব্যাধি বা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যা মোটেই উচিত নয়।
বেকার তাঁর বিচ্যুতি সম্পর্কিত আলোচনায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছেন শক্তিশালী গোষ্ঠীর শাসনের ফলে দুর্বল শ্রেণীর অবস্থানকে। তিনি তাঁর তত্ত্বে Powerful group এর চাপিয়ে দেয়া Label কিভাবে Weaker group এর সদস্যকে Deviant হিসেবে চিহ্নিত করে, তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, বিচ্যুতির মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতান্ত্রিক তত্ত্বগুলো অস্বীকার করে অপরাধ বিজ্ঞানী হাওয়াড বেকার বিচ্যুতি সম্পর্কে নতুন যে ধারার বিকাশ করেন তাকে বলা হয় বিচ্যুতিমূলক আচরণ সংক্রান্ত Labelling theory বা চিহ্নিতকরণ তত্ত্ব। অর্থাৎ সমাজে শাসকগোষ্ঠীর সাথে দুর্বল শ্রেণীর মনস্তান্তিক
দ্বন্ধ এবং সামাজিক অবস্থানের পার্থক্যকে Labelling theory তে প্রধান করে দেখা হয়। এজন্য Labelling theory কে বিচ্যুতির Conflict theory বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।