বাঙালি দর্শনে বেদের প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, বাঙালি দর্শনে বেদের অবস্থান বা গুরুত্ব নির্ণয় কর।
অথবা, বাঙালির দর্শনের আদি উৎস বেদের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বেদ কিভাবে বাঙালি দর্শনে প্রভাবিত করেছে?
অথবা, বাঙালি দর্শনে বেদের প্রভাব সম্পর্কে তুমি যা জানো লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাঙালি দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন। বিভিন্ন যুগে বাঙালি দর্শন বিভিন্ন মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বাঙালি দর্শন প্রাচীন যুগে যেসব চিন্তাধারা দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত হয়েছে বেদ বা বৈদিক সাহিত্য তার মধ্যে অন্যতম। বৈদিক সাহিত্য বা বেদকে বাদ দিলে প্রাচীন বাঙালি দর্শনের যৎসামান্যই অবশিষ্ট থাকে। অধিকন্তু বেদ দ্বারা প্রভাবিত দর্শনই পরবর্তী দার্শনিক চিন্তাধারার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
বাঙালি দর্শনে বেদের প্রভাব/ভূমিকা/গুরুত্ব/অবদান : ভারতীয় উপমহাদেশের যাবতীয় ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তাধারার মূল উৎস হলো বেদ। বেদ মানে জ্ঞান বা পরম জ্ঞান। বেদ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সর্বপ্রাচীন সাহিত্য সংকলন যা আর্যরা রচনা করে। মূলত পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতা, দর্শন ও সংস্কৃতির উৎস ভূমিরূপে স্বীকৃত বৈদিক সাহিত্য বা বেদ হলো মানুষের স্বরূপ সন্ধানের প্রথম সুসংহত প্রয়াস। বাঙালি দর্শনে বেদের প্রভাব নিম্নরূপ :
১. মানবজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : মানবজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কিত বৈদিক মত আমরা ঋত এর ধারণায় পাই। ঋত দ্বারা প্রাকৃতিক বস্তুর সমরূপতা বা একরূপতা প্রকাশ পায়। ঋত এর মাধ্যমেই দেবতারা অন্তরের দিক থেকে মানুষের চিন্তা, কর্ম, সৎ, অসৎ, ভালো, মন্দ বিচার করে থাকেন।
২. নৈতিক জীবনের নির্দেশনা : মানবজীবনকে নৈতিকতার পথে পরিচালিত করার জন্য বেদে বিধান রয়েছে। অবৈধ ভোজন ও দক্ষিণা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। অতিরিক্ত যজ্ঞাদি পরিহার, হিতবাক্য, বাৎসল্য, প্রেম ও দায়িত্ববোধ প্রভৃতি সম্পর্কে বেদে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৩. সংস্কৃতির বিনিময় : আর্য সংস্কৃতির বাহক হলো বেদ। বেদের আচার-অনুষ্ঠান অনার্য-আর্য উভয় শ্রেণির জন্য পালনীয় বিষয়। সময়ের সাথে সাথে বৈদিক সংস্কৃতিচর্চার বিস্তৃতি ঘটে। ফলে অনার্য ও আর্যদের মধ্যে সংস্কৃতি ও চিন্তাধারার বিনিময় হয়।
৪. বর্ণাশ্রম : বেদে জাতিভেদ প্রথা কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ না থাকলেও মানুষকে সহজাত গুণ ও কর্মক্ষমতা অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এ চতুর্বর্ণে বিভক্ত করা হয়েছে। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করাই বেদ বিহিত কর্ম করা।
৫. চতুরাশ্রম : বেদে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস নামে চারটি আশ্রমের কথা বলা হয়েছে। এগুলো বিদ্যার্জন, পারিবারিক জীবন, বনবাস এবং সন্ন্যাসব্রত সম্পর্কিত নির্দেশনা স্বরূপ। মুক্তির জন্য এগুলো আবশ্যক বলে বিবেচিত। বর্তমান বাঙালি সমাজে এগুলোর প্রভাব আজও বিদ্যমান। চতুরাশ্রম পার্থিব ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ লাভের পথ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, বেদ বাঙালি ধর্ম ও দর্শনচিন্তার প্রাথমিক উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বেঁদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাঙালি চিন্তাধারাকে প্রাচীন কাল থেকেই প্রভাবিত করেছে। বর্তমান সনাতন ধর্ম এবং দর্শনচিন্তায় বেদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বাঙালি দর্শন ও সংস্কৃতি বেদ দ্বারা প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রিত।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/