বাঙালি দর্শনে গীতার ভূমিকা কী?

অথবা, ৰাঙালি দর্শনে শীতার প্রভাব কীরূপ?
অথবা, গীতা কিভাবে বাঙালি দর্শনকে প্রভাবিত করেছে?
উত্তর।। ভূমিকা :
বাঙালি দর্শনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। অন্যান্য অগ্রসরমান জাতির মতো বাঙালির দর্শনচিন্তাও ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়েছে। বাঙালি দর্শনে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধর্মের বিষয়বস্তু প্রাধান্য বিস্তার করেছে। গীতা বা শ্রীমদ্বগবদগীতা সনাতন ধর্মের তেমনই একটি গ্রন্থ। গীতার দর্শনতত্ত্ব দ্বারা বাঙালি দর্শন প্রভাবিত
বাঙালি দর্শনে গীতার প্রভাব বা ভূমিকা : সনাতন ধর্মগ্রন্থ গীতায় মানবজীবনের কর্তব্য, অকর্তব্য, চরম পরিণতি ও মোক্ষ প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে। বাঙালি দর্শনে এর প্রভাব নিম্নরূপ।
১. মানবাত্মার রহস্য উদ্ঘাটন : মানব প্রকৃতির স্বরূপ ব্যাখ্যা গীতার অন্যতম উপজীব্য। গীতায়ই যথার্থভাবে মানবাত্মার স্বরূপ উদ্ঘাটনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। গীতার বিভিন্ন শ্লোকে জীবাত্মার অমরত্ব লাভের বিষয়টি বিবৃত
২. আত্মার অবিনাশিতা : শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, “আত্মা অমর, অবিনাশী, আর এজন্য আত্মাই মানুষের প্রকৃত পরিচয়, জীবের আসল সত্তা। দেহের ধ্বংসের পরও আত্মা টিকে থাকে।” শ্রীকৃষ্ণের উপযুক্ত উক্তির দ্বারা আত্মার অবিনাশিতাই ঘোষিত হয়েছে।
৩. আত্মা আধ্যাত্মিক লতা : গীতায় বর্ণিত আত্মা হলো আধ্যাত্মিক সত্তা। শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “আত্মা কাউকে হত্যা করে না কিংবা কারও যারা নিহতও হয় না।” আত্মা অজর, অবিন অমর। আমরা যাকে মৃত্যু বলি গীতায় তাকে আত্মার সেহান্তর বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
৪. কর্মবাদ: গীতায় শ্রীকৃষ্ণ কর্মকে সকামকর্ম ও নিষ্কাম কর্ম এ দুই ভাগে ভাগ করেছেন। সকাম কর্মে বন্ধন হয় এবং নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে বন্ধন মুক্তি ঘটে। নিষ্কাম কর্মই মোক্ষ লাভের সহায়ক।
৫. জ্ঞান ও ভক্তি যোগ: গীতায় কর্মযোগের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হলেও জ্ঞান ও ভক্তি যোগের গুরুত্ব অস্বীকার করা হয় নি। তিনি এ তিনটি পথের মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথা বলেন।
৬. কর্তব্য কর্ম : গীতায় শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যকার সংলাপ থেকে কর্তব্য কর্ম সম্পাদনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়। ন্যায় ও সত্যের জন্য যুদ্ধ করা গীতার শিক্ষা।
৭. বর্ণাল: গীতায় সমাজকে চারটি বর্ণে ভাগ করা হয়েছে। এরা হলো ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। এদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র রয়েছে। গীতানুসারে প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত কর্তব্য পালনের মাধ্যমে মানুষ পূর্ণতা পায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, গীতায় মানবজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। মানুষের মুক্তির জন্য জ্ঞান, ভক্তি ও কর্মের পথের অনুসরণের নির্দেশনা রয়েছে। গীতায় বর্ণবাদ,কর্মবান, ভক্তিবাদ, মোক্ষতত্ত্ব, জ্ঞানবান, কর্তব্যতত্ত্ব প্রভৃতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। বাঙালি দর্শনে গীতার প্রভাব অপরিসীম।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/